রোজা ভঙ্গের নানা কারণ ও মাকরূহ সমূহ
ইসলামী শরিয়তে সিয়ামের শুদ্ধতা ও যথার্থতার জন্য নির্ধারিত কিছু বিধি-বিধান রয়েছে, যার ব্যতিক্রম ঘটলে রোজা ভঙ্গ হয়, অন্যথায় মাকরূহ হয়ে যায়।
রোজা বা সিয়াম ভঙ্গের কারণসমূহ হলো :
(১) ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। অনুরূপ ধুমপান করলে অথবা চিনি-লবন জাতীয় কোন বস্তু মুখে রাখার পর থুতুু গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। তবে ভুলবশত কিছু খেয়ে নিলে অথবা জোরপূবর্ক রোজাদারকে কেউ কিছু খেতে বাধ্য করলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
(২) ইচ্ছাকৃত বমি করলে সিয়াম ভঙ্গ হয়ে যায়। তবে অনিচ্ছাকৃত বমির কারণে সিয়াম ভঙ্গ হবে না। যেমন মহানবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যার অনিচ্ছাকৃত বমি আসে, তাকে সিয়াম কাযা করতে হবে না, আর যে ইচ্ছাকৃত বমি করে, সে যাতে তা কাযা করে (তিরমীজি)”।
(৩) রোজাদার সিয়াম অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে, তাকে উক্ত রোজা কাযা করতে হবে এবং কাফফারা আদায় করতে হবে।
(৪) পানাহারের কাজ করে এমন ইনজেকশন গ্রহণ করাতেও রোজা ভঙ্গ হবে। ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে জীবনীশক্তি বৃদ্ধি করার জন্য কিংবা অন্য কোন কারণে শরীরে ওষুধ প্রবেশ করানো হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। শরীরের শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যেমন গ্লুকোজ জাতীয় ইনজেকশন ব্যবহারে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ খাবার যেই কাজ করে এক্ষেত্রে অনেকটা একই কাজ করছে এটি। তবে শুধুমাত্র অপারগতায় চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ইনসুলিন, পেনিসিলিন জাতীয় ইনজেকশন নেওয়া হয়, তাহলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
(৫) মহিলাদের হায়েয বা নিফাস হলে অর্থাৎ মাসিক রক্তস্রাব শুরু হলে অথবা সন্তান প্রসব করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সমান সংখ্যক রোজা কাযা করে নিতে হবে।
(৬) মুখ খোলা রাখার কারণে বৃষ্টির পানি কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
(৭) হস্তমৈথুন, আলিঙ্গন, অথবা চুম্বনের মাধ্যমে বির্যপাত ঘটালে রোজা ভঙ্গ হবে। তবে স্বপ্নদোষ বা রোগের কারণে বির্যপাত হলে রোজা ভঙ্গ হবে না। কেননা এতে রোজাদারের কোন ইচ্ছা ছিল না।
(৮) দাঁতে আটকে থাকা ছোলা পরিমাণ বা তার চেয়ে বড় খাদ্যদ্রব্য গিলে ফেললে অথবা এর চেয়ে কম পরিমাণ মুখ থেকে বের করে পূণরায় গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
(৯) দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত বের হয়ে তা কণ্ঠনালীতে পৌঁছালে এবং রক্তের স্বাদ অনুভূত হলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
(১০) সাহরি গ্রহণের সময় রয়েছে মনে করে পানাহার করলো, কিন্তু দেখা গেলো সুবহে সাদিক শেষ হয়ে গেল। সে রোজা হবে না।
(১১) কুলি করার সময় অসতর্কতার কারণে কণ্ঠনালীতে পানি প্রবেশ করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়।
যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না, তবে মাকরূহ হয়ে যায়:
(১) গড়গড়া কুলি করা অথবা নাকে বেশি গভীরে পানি দেওয়া।
(২) অপ্রয়োজনে কোন জিনিস চিবানো।
(৩) তরকারি, তৈরিকৃত খাবার ইত্যাদির স্বাদ গ্রহণ করে ফেলে দেয়া। তবে কোন চাকরের মুনিব বা কোন নারীর স্বামী বদ মেজাজী হলে জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে লবন চেখে তা ফেলে দেওয়ার অবকাশ আছে।
(৪) পরনিন্দা করা, মিথ্যা বলা, চোগলখুরী করা, অনর্থক কথাবার্তা বলা, নাটক-সিনেমা দেখা ও যেকোন গুনাহের কাজ করা।
(৫) গোসল ফরজ হয়েছে, এমন অবস্থায় নাপাক থেকে সারাদিন অতিবাহিত করা।
(৬) রোগী বা কোন পরীক্ষার জন্য শরীর দুর্বল হয়ে যায়, এমন পরিমাণ রক্ত দেওয়া।
(৭) রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট-মাজন ব্যবহার করা মাকরুহ। কেননা তা কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
(৮) রোজা অবস্থায় ঝগড়া করা, গালি-গালাজ করা।
(৯) মুখে অধিক পরিমাণ থুথু একত্রে গিলে ফেলা ।
(১০) দাঁতে ছোলা/বুটের চেয়ে ছোট কোন বস্তু আটকে থাকলে তা বের করে মুখের ভিতর থাকা অবস্থায় গিলে ফেলা।
(১১) নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না এরূপ মনে হওয়া সত্ত্বেও স্ত্রীকে চুম্বন করা ও আলিঙ্গন করা। আর রোজা অবস্থায় স্ত্রীর ঠোঁট মুখে নেয়া সর্বাবস্থায় মাকরূহ।
(১২) নিজের মুখ দিয়ে চিবিয়ে কোন বস্তু শিশুর মুখে দেয়া। তবে অনন্যোপায় হয়ে করলে অসুবিধা নাই।
(১৩) ঠোটে লিপিস্টিক লাগালে যদি মুখের ভিতর চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে তা মাকরূহ।