বৈঠকে বিএনপিকে যা বলেছে হেফাজত

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ দেবেন, এটা বিএনপির জোরালো দাবি। তাদের সেই দাবির সঙ্গে হেফাজতে ইসলাম একমত হয়েছে।
শনিবার (৫ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সঙ্গে বৈঠক করেছে হেফাজতে ইসলাম। পরে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
পরে রাত আড়াইটার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে তিনিও উপস্থিত ছিলেন।
‘বৈঠকে বিএনপিকে কী বলেছে হেফাজত’ এই শিরোনামে দেওয়া স্ট্যাটাসে মাওলানা আজিজুল হক লেখেন, বিগত ২৭ রমজান খাস কমিটির এক বৈঠকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও বেশকিছু জরুরি ইস্যুতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসেছে হেফাজত নেতৃবৃন্দ। বিএনপিকে হেফাজত নেতৃবৃন্দ যা বলেছে তা নিচে তুলে ধরা হলো:
১. সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ বহাল রাখা ও ‘বহুত্ববাদ’ শব্দ না ঢোকানোর ব্যাপারে বিএনপিকে সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
২. শাপলা ও জুলাই-আগস্টের গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারকাজ সম্পন্ন হওয়ার পরেই প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই বলে জানানো হয়েছে। গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্টদের বিচার দ্রুত আগাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।
৩. ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের গণহত্যা এবং ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনে চালানো হত্যাকাণ্ডের জন্য আমরা মামলা দায়ের করেছি। শাপলার খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে বিএনপিকেও সরব হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
৪. ২০১৩ সালের ৫ মের মামলায় হেফাজতের আলেম-ওলামা ও কর্মী-সমর্থক ছাড়াও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকেও আসামি করা হয়েছিল। বিএনপির ওই নেতাকর্মীদের মামলাসহ হেফাজত নেতৃবৃন্দের মামলাগুলোও দ্রুত প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দিতে বিএনপির সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
৫. দেশে ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বিএনপিকে শক্ত অবস্থান নেওয়ার আহ্বান করা হয়েছে। তৌহিদি জনতা ও আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে যায় এমন কথাবার্তা বলা থেকেও বিরত থাকতে বিএনপিকে অনুরোধ করা হয়।
৬. আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে জঙ্গি ও উগ্রবাদী রাষ্ট্র হিসেবে ভারত ও আওয়ামী লীগের অপপ্রচারণার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভাষায় কথা বলতে বিএনপিকে আহ্বান করা হয়েছে।
৭. বিএনপির কিছু কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ ও ওলামায়ে কেরাম যে অসন্তুষ্ট, তা বিএনপিকে জানানো হয়েছে। বরং জাতীয় ঐক্য গঠনে বিএনপি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, সেই আশা ব্যক্ত করা হয়েছে।
৮. গণহত্যার দায়ে ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসতে বিএনপিকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
হেফাজত নেতা আজিজুল হক লেখেন, কিছু মিডিয়া তাদের রিপোর্টে বিএনপির একতরফা বক্তব্য তুলে ধরায় জনমনে হেফাজতে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে যা কাম্য নয়। এক্ষেত্রে কিছু মিডিয়া অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। তাদের উচিত ছিল হেফাজত নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকেও বক্তব্য নেয়া, যা তারা করেননি।
তিনি আরও লেখেন, হেফাজতে ইসলাম একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জোটে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এ ধরনের কোনো বক্তব্য হেফাজত থেকে দেওয়া হয়নি। অন্য কোনো গোষ্ঠীর মাধ্যমে এমন বক্তব্য প্রচার করা হলে তা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিকৃত বক্তব্য। হেফাজত কখনো কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি এবং ভবিষ্যতেও হবে না। নির্বাচনী রাজনীতি থেকেও হেফাজত সবসময়ই মুক্ত থাকবে।
হেফাজতের নাম বিক্রি করে কেউ রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করলে তা সফল হবে না। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াবলীতে হেফাজত জনগণের পক্ষেই সবসময় মতামত দেয় এবং ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের অবস্থান পূর্বের মতোই অবিচল থাকবে ইনশাআল্লাহ। উপরোক্ত ইস্যুগুলো নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও হেফাজত নেতৃবৃন্দ শিগগিরই বৈঠকে বসবেন। আগামী ১২ এপ্রিল কয়েকটি ইসলামী দলের সাথে বৈঠক হবে ইনশাআল্লাহ।