পাকিস্তানের সাথে ঢাবির সম্পর্কের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিবাদ
একাত্তরে গণহত্যা ও গণধর্ষণে জড়িত পাকিস্তানের সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক স্থাপনের ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত এক লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, "১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও গণধর্ষণে জড়িত পাকিস্তানের সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক স্থাপনের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অবিলম্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পরিপন্থী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ঢাবির শিক্ষার্থীদের দাবি অনুয়ায়ী বিগত ২০১৫ সালে জরুরী সিন্ডিকেট সভা ডেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সম্প্রতি গত ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় গোপনে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে যা মহান মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ঢাবির নীতি ও আদর্শের পরিপন্থী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি চরম অবমাননা।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী পরিকল্পিত ভাবে ঢাবির সকল আবাসিক হল ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নির্মমভাবে হত্যা ও নির্যাতন করেছিল। ঢাবিতে এখনো সেই নারকীয় গণহত্যার চিহ্ন ও শহীদদের অনেক বধ্যভূমি রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের দাবি অনুযায়ী ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর জরুরী সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, পাকিস্তান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রি থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৯ মাস ধরে এদেশে বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা চালিয়ে তারা অস্বীকার করেছে। এমন মিথ্যাচার রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাখতে পারে না। যতদিন পর্যন্ত তারা গণহত্যা, গণধর্ষণ ও নির্যাতনের কথা স্বীকার করবে না ততদিন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের সম্পর্ক রাখবে না। নতুন করে ঢাবির কোনো শিক্ষার্থী পাকিস্তানে উচ্চশিক্ষার জন্য যাবে না। একইভাবে পাকিস্তানের কোনো শিক্ষার্থীকেও ঢাবি গ্রহণ করবে না। অবৈধ ও অসাংবিধানিক অন্তবর্তীকালীন সরকার কর্তৃক অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তির দোসর ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সিন্ডিকেট সভায় একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যা কখনোই ঢাবির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মেনে নিবে না।
গত ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ প্রায় এক দশক পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সিদ্ধান্তের গ্রহণের জন্য এই ন্যাক্কারজনক পরিকল্পনা করেছিল যা ঢাবির হাজার হাজার শহীদের রক্তের সাথে চরম বেঈমানী। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সাথে ঢাবির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঢাবির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মহান মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি রাজাকার আলবদরদের সহযোগিতায় পাকিস্তান সেই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ঢাবিতে ২৫ মার্চে গণহত্যা, গণধর্ষণ ও ১৪ ডিসেম্বর শত শত বুদ্ধিজীবী শিক্ষককে আবাসিক ভবন থেকে তুলে নিয়ে যেয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এখনো সেই নির্মম ও নৃশংস গণহত্যার ইতিহাস ভুলে যায়নি। বর্তমান ঢাবি প্রশাসন পরিকল্পিত ভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি ও গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তির এজেণ্ডা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে পাকিস্তান থেকে অস্ত্রবাহী জাহাজ আনয়ন, ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি শিবিরের রাজনীতি চালুকরণ ও পাকিস্তানের সাথে একাডেমিক সম্পর্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত সবকিছু একই সূত্রে গাঁথা। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বর্তমান ঢাবি প্রশাসনের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চরিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙালিকে গণহত্যা ও ২ লক্ষ মা-বোনকে গণধর্ষণের অপরাধে পাকিস্তান আজও পর্যন্ত বাংলাদেশের নিকট রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমা চায়নি।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার একাত্তর সালে বাঙালি গণহত্যা ও গণধর্ষণে জড়িত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের বিচার করেনি। সুতরাং পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের কোন ধরনের সম্পর্ক স্থাপন এদেশের জনঘণ কখনোই মেনে নিবে না। সম্প্রতি ঢাবির সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী সিদ্ধান্ত অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় বর্তমান অবৈধ ঢাবি প্রশাসনের পদত্যাগ দাবিসহ কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।"