শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১৫:৫৪, ১৬ জুলাই ২০২৪

ছাত্রলীগ নেতাদের পদত্যাগের হিড়িক

ছাত্রলীগ নেতাদের পদত্যাগের হিড়িক
সংগৃহীত

বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-কুমিল্লা সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটিতে থাকা নেতাকর্মীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। এখন পর্যন্ত শতাধিক পদত্যাগ দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা।

সোমবার রাত ১০টার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-নেত্রীরা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দিতে থাকেন।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যায়।

কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার কারণেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত হল এবং নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানা যায়। এরই মধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের ১৬তম ব্যাচের সকল ছাত্রী একযোগে ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন।

কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন, একজন ছাত্র হয়ে আরেকজন ছাত্রের শরীরে এমন নির্মমভাবে যারা আঘাত করতে পারে, সেই দল থেকে তারা ইস্তফা নিয়েছেন।

নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে প্রথম পদত্যাগকারী নুসরাত জাহান সুরভী বলেন, 'আমিসহ নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের সকল পলিটিক্যাল মেয়ে ছাত্রলীগ থেকে ইস্তফা দিলাম। আজ থেকে লীগের কোনও প্রোগ্রামে যাব না।’

আইন অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাসেল মিঞা লিখেছেন, ‘না বুঝার বয়সেই রাজনীতির প্রতি একটা প্যাশন সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এই বাংলাদেশের নষ্ট রাজনীতির চর্চা দেখে ধীরে ধীরে আমার মনে রাজনীতির প্রতি আবেগ, ভালোবাসা মরে যেতে লাগলো। কেন জানি আজকে তার চিরতরে সমাধি ঘটলো। সামর্থ্য হলে নিজের থেকে দেশ ও সমাজের জন্য ভূমিকা রাখবো ইনশাআল্লাহ। আর একটি ঘোষণা আমি দুটো পদ হোল্ড করতাম। আজকে সে দুটো পদ থেকে আমি সজ্ঞানে অব্যাহতি নিলাম।’

বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের শিক্ষার্থী শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক তানভীর আহমেদ গাজী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি আসলে রাজনীতিপ্রিয় মানুষ নই, বরং আমি একজন সাহিত্য এবং সংস্কৃতিমনা লোক। একদা এক সিনিয়র বলেছিলেন, দেখ গাজী তুই লেখক মানুষ, ক্যাম্পাসে পরিচিত মুখ, তুই পদে থাকলে আরও চারজন জুনিয়র আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমি বেচারা না কোনো মিছিলে গেলাম, না কোনো মিটিংয়ে গিয়েছিলাম। অটোমেটিক্যালি পদ পেয়ে গেলাম। বাহ! আমি আমার ওয়ালে সেটা আদৌ পোস্ট করিনি, যারা উইস করেছিল তাদের কেবল ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। তো আজকের এই দিনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, আইন অনুষদ, শাখা ছাত্রলীগের অর্থ সম্পাদক পদ হইতে ইস্তফা দিলাম। আমি একজন সাহিত্য ও সংস্কৃতিমনা মানুষ, রাজনীতি আমার শোভা পায় না! আজকের বর্বরোচিত ঘটনা আমাকে সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে!’

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সামিন বখশ সাদী লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। ছাত্র রাজনীতি ছিল আমার পছন্দের জায়গা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের শেষের আমি এর বাস্তবতা বুঝতে পারি এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে শুরু করি। যার কারণে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা কমিয়ে দিতে শুরু করি। কিন্তু আজকের এই ঘটনার পর আমার মনে হয় না এরকম কেনোকিছুর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। এমনিতেই অনেকদিন ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার কোনও সম্পৃক্ততা নাই। তারপরও বলতেছি আমাকে কেউ কখনো এসবের জন্য ডাক দিবেন না। ন্যায় এবং সত্যকে তুলে ধরতে না পারলে আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা রাখি না। এই পদটি আমি আর হোল্ড করি না।’

এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও ইতোমধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। হামলার ঘটনাকে ‘নৃশংস’ উল্লেখ করে পদত্যাগ করা শুরু করেছেন সংগঠনটির নেতারা।

পদত্যাগকারী সকল শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, যেই ছাত্র সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়, নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা করে, তারা সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ নয়। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা অনুচিত।

বিজয় একাত্তর হলের সহ-সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করা শিপন মাহমুদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি চলমান ছাত্রআন্দোলনের পক্ষে অবস্থান করছি। ন্যায়ের পক্ষে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শোকজ খাওয়া এবং মুচলেকার মুখে পড়া ছাত্র আমি। আমি আজীবন নজরুল। প্রতিবাদ আমার রক্তে। আমি আজন্ম প্রতিবাদী পুরুষ। চলমান যৌক্তিক ছাত্রআন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বিজয় একাত্তর হল-এর সহ-সভাপতির পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। অন্যায় আর শিপন এক লাইনে থাকে না।‘

কুয়েত মৈত্রী হল থেকে পদত্যাগ করা জুয়েনা আলম মুন লিখেছেন, ‘আমি জুয়েনা আলম মুন, অর্থ সম্পাদক বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রলীগকে ন্যায়ের কাণ্ডারি ভেবে ছাত্রলীগ করতাম। কিন্তু এখন এই সংগঠনের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা ছিল এটা মনে করলেও আমার রক্তাক্ত বন্ধু-বান্ধবী, সিনিয়র, জুনিয়রদের চেহারা মনে পড়বে। তাই স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে পদত্যাগ করছি। আমার সঙ্গে কারো ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। পদের অব্যাহতির ব্যাপারটা কেউ পারসোনালি নেবেন না। যারা ভালোবাসা পাবার যোগ্য তারা সব সময়ই ভালোবাসা পাবেন।‘

এছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করা মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নিজ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের ছয়জন নেতা।

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের জেরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের পোস্টে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছেন তারা। 

পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতারা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান সামি ও রসায়ন বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি তাওসিফ কবির, মনোবিজ্ঞান বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি রনি সরকার ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আশিকুর রহমান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখার সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান নোমান এবং শিঞ্জন বসাক।

মাহমুদুল হাসান নোমান ফেসবুকে লেখেন, আমি নিজ ইচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ শাখা ছাত্রলীগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করলাম। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে ট্যাগ লাইনে বাকি দিন কাটাতে চাই। একই কথা লেখেন শিঞ্জন বসাকও।

জনপ্রিয়