আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরাজয়: একটি আত্মসমীক্ষণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বিবেচিত হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তারা চরম রাজনৈতিক পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে। এই পরাজয়ের পেছনে দায়ী কিছু নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে, যা কেবল ক্ষমতায় থাকার ব্যর্থতা নয়, বরং দলীয় নেতৃত্বের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির ফসল।
প্রথমত, দলীয় সাধারণ সম্পাদকের চরম ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা রক্ষার পরিবর্তে দলীয় কোন্দলের মাধ্যমে দলকে বিভক্ত করেছেন। দলের অভ্যন্তরে একাধিক গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে, যারা নিজেদের স্বার্থে কাজ করছে। একের পর এক দলীয় বিভেদ এবং সাংগঠনিক দুর্বলতা আওয়ামী লীগের শক্তিকে ভেঙে ফেলেছে।
দ্বিতীয়ত, নেতাদের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও অর্থ উপার্জনের প্রতি আসক্তি পরিলক্ষিত হয়েছে। যাদের দায়িত্ব ছিল জনগণের জন্য কাজ করা, তারা ব্যস্ত ছিলেন নিজের পকেট ভারী করার কাজে। দুর্নীতি এবং ব্যক্তিস্বার্থ কেন্দ্রিক রাজনীতি আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ও জনপ্রিয়তাকে ক্ষুণ্ণ করেছে।
তৃতীয়ত, প্রশাসনে আত্মীয়করণ ও দলীয়করণের প্রবণতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। প্রশাসন, যা হওয়া উচিত নিরপেক্ষ ও দক্ষ, তা হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক মদদপুষ্ট , তোষামতকারী ও অসৎ কর্মচারীদের আখড়া। এর ফলে প্রশাসন কার্যকরভাবে কাজ করতে পারেনি এবং সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ধীরে ধীরে কমে যায়।
৫ আগস্ট সরকারের পতনের পেছনে এসব কারণই মূলত দায়ী। দলের ভেতরের কোন্দল, দুর্নীতি, নেতাদের দায়িত্বহীনতা, এবং প্রশাসনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কারণে আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ এ ধরনের নেতৃত্বকে আর সহ্য করতে পারেনি, যার ফলে সরকার পতনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এই পরাজয় আওয়ামী লীগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হওয়া উচিত। দলকে পুনর্গঠিত করতে হলে প্রথমেই ভেতরের সমস্যা ও নেতাদের দায়িত্বহীনতা দূর করতে হবে। দলের ভেতরে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। দলকে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে, দলীয় নেতাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়। অন্যথায়, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার হয়ে যেতে পারে।
লেখক
গাজী জহিরুল ইসলাম
সাংবাদিক ও কলামিস্ট