মঙ্গলবার ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

নাজমুন নাহার

প্রকাশিত: ১৭:০১, ১৭ আগস্ট ২০২৪

ছাত্র সমাজের অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত

ছাত্র সমাজের অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত
নাজমুন নাহার

স্বাধীনতার ৫৩ বছরের ইতিহাসে, আমাদের জাতি একটি অনন্য বিজয় অর্জন করেছে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে ছাত্র সমাজ, আজ এমন একটি দেশ উপহার দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে, যা আমাদের সকলকে গর্বিত করবে। জুলাই মাসে, একের পর এক অহিংস আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে তারা দেশের জন্য এক বিপুল সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দ্বার উন্মোচন করেছে। দেশের সাধারণ জনগণ, একমাত্র কিছু কোটাধারী ছাড়া, ছাত্রদের এই আন্দোলনের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। তাদের সক্রিয় বা মানসিক সহায়তার কারণে আজ আমরা সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি। 

এখন আমাদের দায়িত্ব এই বিজয়কে ধরে রাখা এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ জন্য প্রয়োজন জনগণের স্বার্থবান্ধব প্রশাসন এবং দায়িত্বশীল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। অতীতের অভিজ্ঞতা আমাদের দেখিয়েছে, ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, আমরা এমন একটি প্রশাসন এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায় পেয়েছি, যা কখনোই জনগণের জন্য সহনীয় ছিল না। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা এবং কিছু কোটাধারীদের খুশি করার জন্য নিয়ম-কানুনের যথাযথ প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা উপেক্ষিত থেকে গেছে। আমরা এমন একটি প্রশাসন এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আশা কখনো করিনি এবং ভবিষ্যতেও করব না। তাই সময় এসেছে এই ব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের।

আমাদের দেশে প্রশাসন এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য যে নিয়ম-কানুন রয়েছে, সেগুলি মূলত জনগণের স্বার্থবান্ধব। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই নিয়মগুলির যথাযথ প্রয়োগ হয়নি বা করা যায়নি। এর ফলে দেশে দুর্নীতি এবং চুরি-চামারি বেড়েছে, আর সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। এ পরিস্থিতি আর সহনীয় নয়।

দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়লেও, দেশে পণ্যের দাম কমছে না। এমনকি, একবার কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা আর কমে না। এই অবস্থা পাল্টানোর এখনই সময়। আমাদের দেশের প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীদের উচিত, এই সমস্যার সমাধান করা এবং জনগণের আস্থার প্রতিদান দেওয়া।

বর্তমানে আমাদের সমাজে মানুষের সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয় তার সম্পদের ভিত্তিতে। এই অবস্থার কারণে শ্রেণি বৈষম্য এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের বৈষম্য দূরীকরণের জন্য, বর্তমান আন্দোলন অত্যন্ত সময়োপযোগী ছিল।

যদিও এ ধরনের আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল বহু আগে, আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। কিন্তু দেরিতে হলেও কোটা বৈষম্য দূরীকরণের আন্দোলন হয়েছে, যা আমাদের শ্রেণি বৈষম্য কমিয়ে একটি সমানতালে বিকাশমান সমাজ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা খুবই সাধারণ: একটি সহনীয় এবং সুষ্ঠু সমাজ ব্যবস্থা। আইনের সঠিক প্রয়োগই পারে সমাজের সকল প্রকার বৈষম্য দূর করতে। প্রশাসনের দক্ষ জনবল এবং ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীলতা এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে। এখন সময় এসেছে পণ্যের দাম সহনীয় রাখার এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষার। 

যথাযথ আইন এবং নীতিমালা থাকলেও, সেগুলির যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় দেশের অবস্থা সহনীয় হয়নি। এটা এখনই পরিবর্তন করতে হবে। একটি দক্ষ প্রশাসন এবং দায়িত্বশীল ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ই পারে দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে। নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, তারা দেশের সকল মানুষের স্বার্থরক্ষায় যথাযথ ভূমিকা পালন করবে এবং এই বিজয়কে ধরে রাখবে।
 

লেখক- সাংবাদিক ও লেখক

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়