ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে এক করার প্রস্তাব

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আবার একত্র করার সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন। ঢাকায় একক মহানগর সরকার গঠনের পরামর্শ দিয়ে কমিশন জানায়, এখনকার কাঠামোয় কাঙ্ক্ষিত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।
গত রবিবার (২০ এপ্রিল) কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একক সিটি করপোরেশনের অধীনে যে ২০টি অঞ্চল আছে, সেগুলোর প্রতিটিকে ওই এলাকার ওয়ার্ডগুলো নিয়ে একটি করে স্বতন্ত্র ‘সিটি কাউন্সিল’ (যেমন মিরপুর একটি সিটি কাউন্সিল হতে পারে) করার সুপারিশ করেছে কমিশন। এই সিটি কাউন্সিলই এলাকাভিত্তিক মূল কাজগুলো করবে। আর সিটি করপোরেশন মূলত সমন্বয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে। এখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নির্বাচিত হবেন সরাসরি ভোটে। আর সিটি কাউন্সিল ও সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হবেন কাউন্সিলরদের ভোটে।
কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত আট সদস্যের কমিশন বলেছে, এলাকাভিত্তিক স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠন করলে স্থানীয় জনগণ সরাসরি উপকৃত হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিটি সিটি কাউন্সিলে থাকবে ৯ থেকে ১৫টি ওয়ার্ড।
প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে সরাসরি ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। এক-তৃতীয়াংশ আসনে নির্বাচিত হবেন নারী কাউন্সিলর। এই কাউন্সিলররাই নিজেদের মধ্যে ভোট দিয়ে নির্বাচন করবেন কাউন্সিলের মেয়র।
ঢাকার সব কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে গঠিত হবে মহানগর সিটি করপোরেশন। এখানকার মেয়র নির্বাচিত হবেন ওই কাউন্সিলরদের ভোটে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন কাউন্সিলরসহ বাইরের যোগ্য ব্যক্তিরাও।
কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিটি সিটি কাউন্সিল নিজস্ব ভৌগোলিক সীমানায় কাজ করবে। থাকবে নিজস্ব প্রশাসন ও বাজেট। এই কাউন্সিলগুলো জননিরাপত্তা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, মশকনিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় রাস্তা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ব্যবসা বা পেশার লাইসেন্স প্রদানসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা দেবে। স্থানীয় কর সংগ্রহ করবে সিটি কাউন্সিল, করপোরেশন নয়।
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরীকে অঞ্চলভিত্তিক ২০টি সিটি কাউন্সিলে ভাগ করা যেতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে বনানী–বারিধারা–গুলশান, উত্তরা, দক্ষিণ খান–উত্তরখান, মিরপুর, পল্লবী, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি–রায়েরবাজার, লালবাগ, কেরানীগঞ্জ, রামপুরা–বনশ্রী–খিলগাঁও–মালিবাগ–মুগদা–বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী–সায়েদাবাদ, রমনা–মতিঝিল–দিলকুশা, আরমবাগ–বাংলাবাজার–ওয়ারী–সূত্রাপুর–কোতোয়ালি, গাবতলী–আমিনবাজার, বসুন্ধরা–ভাটারা, কাফরুল–ক্যান্টনমেন্ট, খিলক্ষেত–কুড়িল, সাতারকুল, ডেমরা ও তেজগাঁও–আগারগাঁও–সংসদ ভবন এলাকা।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত করে ২০১২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর আগে ঢাকাকে পৌরসভা হিসেবে গঠিত করা হয়েছিল ১৮৬৪ সালে এবং ১৯৯০ সালে নাম হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা লাসনা কবীর বলেন, দুই সিটি থাকলে সেবার মান নিশ্চিত করা সহজ হয়। তবে গণতন্ত্রের চর্চা বজায় রাখতে মেয়র নির্বাচনে সরাসরি ভোটাধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা জরুরি।