মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ২০:১২, ১৭ মার্চ ২০২৫

পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না: প্রধান উপদেষ্টা

পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না: প্রধান উপদেষ্টা
সংগৃহীত

পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়া যাবে না। আইনশৃঙ্খলা পুলিশের হাতেই বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশ গড়ার ক্ষেত্রে পুলিশের অপরিসীম গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন।

সোমবার (১৭ মার্চ) পুলিশের মাঠ পর্যায়ের ১২৭ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে একথা বলেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে সকাল সোয়া ১১টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা নিজেই।

ড. ইউনূস বলেন, দেশ বদলাতে হলে একক নির্দেশে নয়, বরং সবাইকে নিয়ে এক একটি টিম হয়ে কাজ করতে হবে এবং বাংলাদেশে যত টিম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিম হলো পুলিশ।

তিনি বলেন, ‘সরকার যা কিছুই করতে চায়, শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাত দিয়েই করতে হয়। তারা সব করে দেয় না, তারা পরিবশেটা সৃষ্টি করে। যে পরিবেশটা না থাকলে কোনো কাজই আর হয় না।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পুলিশের কথা প্রসঙ্গে বারবার আমরা দুটো শব্দ বলছি—আইন ও শৃঙ্খলা। পুলিশের হাতেই এটাকে এক্সিকিউট করতে হবে। এই পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে সরকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের অধিকার, নাগরিকের অধিকার—কিছুই থাকে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পুলিশকে অবহেলা করে দেশ গড়তে পারব না। তারাই সম্মুখসারির মানুষ। তারা ক্ষেত্র প্রস্তুত করলেই বাকি জিনিসগুলো হয়। আইনশৃঙ্খলা না থাকলে যত বড় বড় চিন্তাই হোক, যত টাকাই থাকুক, কোনো কাজে আসবে না।’

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ করতে পুলিশের অত্যন্ত বেগ পেতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো সমাধানের চেষ্টা করব।’

‘পুলিশ হব বন্ধু। কারণ, আমি আইনের পক্ষের মানুষ। আমি আইন প্রতিষ্ঠা করার মানুষ। আইন হলো আমাদের সবার আশ্রয়। পুলিশ হলো আশ্রয়দাতা। আমরা এই ইমেজটা যদি প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, মানুষ অতীতের সব কথা ভুলে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ সম্বন্ধে ইমেজ হলো, তারা খারাপটাই আগে দেখে, খারাপটা আগে করে। কিন্তু আমরা ভালোটা আগে দেখব, ভালোটা আগে করব। দু-একজন করাপ্ট হলে বাহিনী পালটায় না। বাহিনী সামগ্রিকভাবে একটা কাঠামো এবং এই কাঠামোর অনেক শক্তি।’

পুলিশকে নতুন শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘মানুষকে বাধা দেব না। তার পথকে সহজ করব। তার পাশে থাকব। তাহলে দেখব যে, এ দেশের কোনো সমস্যা হবে না। শুধু মানুষের পাশে থেকে তাদের আইনের ভেতরে রাখতে হবে। তাকে বলতে হবে, আইনের ভেতরে থাকেন, আপনার যা দরকার আমি করে দেব।'

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন আয়োজন প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করে এসছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন আসছে, নানা রকমের সমস্যা হবে, নানা রকম চাপ আসবে। অনেকে ডেসপারেট হয়ে যাবে—আমার কেন্দ্রে জিতাতে হবে, ওর কেন্দ্রে জিতাতে হবে। সেখানে পুলিশ আইন মানতে চাইলে তারা ক্ষ্যাপাক্ষেপি করবে। আমাদের সেখানে শক্ত থাকতে হবে, আইনের ভেতরে থাকতে হবে। যাতে করে যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, সে সরকার আইনের সরকার হয়। যে আইন ভেঙে আসবে, সে কখনো আইন ধরে রাখতে পারবে না। কারণ, আইন ভাঙাই তার অভ্যাস।’

বৈঠকে দেশের সব জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), রেঞ্জ ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক), মহানগর পুলিশ কমিশনার, সব ইউনিটের প্রধান, পুলিশ সদর দফতরের তিনজন ডিআইজি ও সব অতিরিক্ত আইজিপি এবং আইজিপি উপস্থিত ছিলেন।

আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি প্রমুখ।

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়