ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়াতে রাজি চীন
চীনের কাছ থেকে অগ্রাধিকারমূলক ক্রেতা-ঋণ এবং সরকারি রেয়াত-ঋণ নামে দুই ধরনের ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ। সেই ঋণের সুদের হার ২-৩ শতাংশ এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছর। বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ পরিশোধের এই সময় বৃদ্ধি এবং ঋণের সুদ হার কমানোর বিষয়টি এবার বিবেচনা করছে চীন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-য়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই সম্মতি পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ও চীন ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর তৌহিদ হোসেন বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো চীনে দ্বিপাক্ষিক সফর করলেন। চলতি বছর দুই দেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। উন্নয়ন সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন, খাতভিত্তিক সহযোগিতা এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ সম্পর্কের সব বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উভয়পক্ষ পারস্পরিক স্বার্থের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও গভীর করার এবং ভাগাভাগি সমৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জোরালোভাবে বলেন, দুইপক্ষের সম্পর্কে বাংলাদেশ নতুন গতি (আরও বেগবান) সঞ্চার করতে চায়।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এক চীন নীতির প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭৫৮ নম্বর প্রস্তাবের প্রতি অটল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন বাংলাদেশে আমাদের জাতিকে সমতা, বৈষম্যহীনতা, দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা এবং সবার জন্য সম্পদের সমান প্রবেশাধিকারের নীতিতে পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে।
পাশাপাশি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরের ৩ বছর ধরে চীনা বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার অনুরোধে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেন, বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার জন্য চীনের কুনমিংয়ে ৩/৪টি বিশ্বমানের হাসপাতাল বিশেষভাবে মনোনীত করা হবে। বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ঢাকায় একটি বিশেষায়িত চীনা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই।
বৈঠকে দুইপক্ষের মধ্যে শিক্ষা, রেলওয়ে, কৃষি, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, পশুপালন, মৎস্য, জাহাজ ভাঙা, টেকসই ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি এবং নীল অর্থনীতির মতো খাতে আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির সহযোগিতা এবং সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।