আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনে সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা সফল হয়েছি। সরকারের সময়োপযোগী ও বিচক্ষণ পদক্ষেপের ফলে দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ রয়েছে।’
দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাফল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেখান থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই আমার মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলার আরো উন্নয়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম তার মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
এসময় গত তিন মাসে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের ৪০ জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে বলে স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, পুলিশকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সাড়ে তিন হাজার কনস্টেবল ও এক হাজার দুইশ সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগের পাশাপাশি ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত বদলিসহ বাহিনীতে বড় রদবদল করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীতে আরও জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পুলিশের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার ৪২ জন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে এবং গত তিন মাসে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক থেকে কনস্টেবল পদে ১ হাজার ৩৩০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন।
এ ছাড়া দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তার জন্য সেনা, নৌ ও বিমান এই তিন বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
শান্তিপূর্ণভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়াকে একটি সাফল্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হওয়া আমাদের বড় সাফল্য।’
বাসসের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আলাপকালে নিরাপত্তা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে তাদের সাফল্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর পুলিশ তাদের দায়িত্বে অনুপস্থিত ছিল এমন পরিস্থিতি থেকে আমরা আইনশৃঙ্খলাকে সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।’
তিনি বলেন, ২০২৩ এবং ২৪ সালের অক্টোবর মাসের পরিসংখ্যান তুলনা করলে দেখা যাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো। কারণ খুন, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তাদের পাঁচ লাখ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হবে– ওই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, দল ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে এমন কথাও কেউ বলতে পারবে না।
চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশকে যেকোনো ধরনের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও মাদকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। তবে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যাবে না বলেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার আদেশ পুনর্ব্যক্ত করেন।
‘পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পরে হয়রানির মামলায় গ্রেপ্তার করা উচিত’ বলে পুনরুল্লেখ করেন তিনি।
একইসঙ্গে অন্যায় ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী ও জনগণের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে না– তাও নিশ্চিত করতে বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বেশিরভাগ দপ্তর যেমন- পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, বিজিবি, র্যাব, ডিএনসি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পরিদর্শন করেছি এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে জনগণের সেবায় সব প্রকার দুর্নীতি ও অনিয়ম থেকে দূরে থেকে স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছি।
বাহিনীতে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তন হঠাৎ কোনো বিষয় নয়। তবে বাহিনীতে মানসিকতায় পরিবর্তন ঘটছে। কিন্তু সময় লাগবে।’