শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২১:৫৩, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

বাতিল করা দিবস নিয়ে আপত্তি তসলিমা নাসরিনের

বাতিল করা দিবস নিয়ে আপত্তি তসলিমা নাসরিনের
তসলিমা নাসরিন

বরাবরই নানা বিষয়ে মন্তব্য করে আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে থাকেন ভারতে নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন। এবার ৮টি জাতীয় দিবস বাতিল নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলেন তিনি। এই পোস্টে নেটিজেনদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। 

 

বুধবার (১৬ অক্টোবর) তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক থেকে পোস্টটি করেন।

 

তসলিমা নাসরিনের পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো -

 

বাংলাদেশের 'এনজিও সরকার' ৮টি দিবস বাতিল করেছে। এর মধ্যে ৬ টি দিবস নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই। তবে দুটো দিবস নিয়ে আমার আপত্তি আছে। ৭ই মার্চ আর ১৫ আগস্ট। ১৫ আগস্ট সম্পর্কে বলবো, এই দিবসটি বাতিল করা উচিত নয়, এটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে রাখা উচিত, কারণ সেদিন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল জাতির পিতাকে। 

 

তবে আমার ঘোরতর আপত্তি, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস ৭ই মার্চকে বাতিল করা নিয়ে। ৭১'এর ৭ই মার্চে ঐতিহাসিক যে ভাষণ দিয়েছিলেন শেখ মুজিবর রহমান, সেই ভাষণটি না শুনলে মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তো না, দেশের কোটি কোটি মানুষকে বর্বর পাকিস্তানি সেনা আর বিশ্বাসঘাতক রাজাকাররা মিলে হত্যা করতো। বিজয়ের মুখ হয়তো আমরা দেখতাম না। বাংলাদেশ নামের একটি দেশই হয়তো পেতাম না। হয়তো পশ্চিম পাকিস্তানের গোলামী করেই যেতে হতো বাঙালিকে। 

 

৭ই মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় অর্জন, পাকিস্তানের শোষণ থেকে মুক্তি পাওয়া, নতুন দেশ বাংলাদেশের জন্ম হওয়া --এসব কাদের সহ্য হয় না? রাজাকারদের, রাজাকরের বাচ্চাদের, আর রাজাকারের নাতিপুতিদের। এদের রাগ ভারতের ওপরও। কারণ দেশ স্বাধীন করতে ভারত আমাদের সাহায্য করেছে। ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেও গাড়লগুলো এখন মুখের লাগাম টেনেছে। কারণ বুঝতে পেরেছে ভারতকে ক্ষেপিয়ে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। 

 

অগত্যা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ক্ষেপালে ক্ষতি নেই বলে ক্ষেপাচ্ছে। তারা ভুলে গেছে যে শুধু আওয়ামী লীগই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক নয়। রাজাকার এবং তাদের গোষ্ঠী ছাড়া দেশের সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক, ৭ই মার্চের ভাষণ শুনলে এখনও তাদের গুজবাম্প হয়, এখনও তাদের চোখ জলে ভরে ওঠে। 

 

রাজাকারের বাচ্চা আর নাতিপুতিগুলো এখন যদি ২১শে ফেব্রুয়ারি আর ১৬ই ডিসেম্বরকে বাতিল ঘোষণা করে, অবাক হবো না। যদি শহীদ মিনার আর স্মৃতিসৌধ ভেঙ্গে গুঁড়ো করে, অবাক হবো না। যদি দেশের নাম বদলে ইসলামিক রিপাবলিক অফ বাংলাস্তান বা পূর্ব পাকিস্তান রাখে, অবাক হবো না। যদি ১৪ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করে, অবাক হবো না। যদি জাতির পিতা হিসেবে জিন্নাহর ছবি টাঙায়, অবাক হবো না। যদি শরিয়া আইন জারি করে, অবাক হবো না। দেশকে যদি বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়, অবাক হবো না।

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়