হজযাত্রীদের হয়রানি : দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ
হজযাত্রীরা যেন নির্বিঘ্নে হজে গিয়ে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার না হয়ে হজ পালনপূর্বক দেশে ফিরে আসতে পারেন সে জন্য যথাযথভাবে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।
হজ সংক্রান্ত সব এজেন্সি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, দূতাবাস, হজ মিশনসহ সব কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করা এবং অধিকতর স্বচ্ছতার সঙ্গে হজ ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা; হজের মৌসুমে প্রয়োজন অনুসারে হেল্পডেস্ক চালুসহ সহায়ক তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; হাজিদের অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করা এবং পরামর্শ গ্রহণ করে সেবা সহজ ও অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করে কমিশন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান জানান, হজ সম্পর্কিত সব কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাদের ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানপূর্বক ভবিষ্যতে এ ধরনের সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সৌদি হজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সমস্যা নিরসন করার উদ্যোগ গ্রহণসহ দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্তপূর্বক বর্ণিত অভিযোগসমূহ প্রতিকারের যথাযথ পন্থা নিরূপণ করে ভবিষ্যতে এ ধর্মীয় ব্রত পালনের সহজ সমাধান প্রদানসহ দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য সচিব, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাস, রিয়াদ, সৌদি আরবকে বলা হয়েছে।
আদেশের অনুলিপি সদয় অবগতির জন্য ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ৯ অক্টোবর প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।
মানবাধিকার কমিশনের আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক লোক পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। হাজীদের অধিকাংশই সিনিয়র সিটিজেন। এ হজ কার্যক্রম তদারকির জন্য মক্কা ও মদিনায় বাংলাদেশ হজ মিশন অফিস রয়েছে। তাছাড়া প্রতিবছর দেশ থেকে বিশালসংখ্যক বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারি অর্থ ব্যয়ে ভিআইপি মর্যাদায় নামকাওয়াস্তে হজ তদারকির কারণ দেখিয়ে হজ করতে যান কিন্তু অর্থের বিনিময়ে গমনকারী সাধারণ হাজিদের হজ পালনকালে মিনা, আরাফা ও মুজদালিফায় হজের মূল কার্যাদি পালনের সময় প্রতিকূল আবহাওয়া, প্রচণ্ড গরম, জামারা থেকে তাঁবুর দূরবর্তী অবস্থান, থাকা, খাওয়া ও টয়লেট সমস্যা সেইসাথে দায়িত্বরত সংশ্লিষ্টদের অসহযোগিতা, ব্যর্থতাসহ নানা কারণে হাজিদের অনেক দুর্ভাগ্যজনক কষ্ট ভোগ করতে হয়। হজ এজেন্সি বা বাংলাদেশ হজ মিশনের কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ায় সব বেসরকারি হাজিদের যাতায়াত ও অবস্থানে মানবেতর অবস্থায় হজ পালন করে দেশে ফিরতে হয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) যার প্রত্যক্ষদর্শী।
আদেশনামায় আরও উল্লেখ রয়েছে, হজ একটি পবিত্র ব্রত। কেবল যথাযথ সামর্থ্যবান ব্যক্তিই হজে যেতে পারেন মর্মে ধর্মীয় বিধান রয়েছে। তথাপিও, বিপুলসংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রীয় খরচে ভিআইপি মর্যাদায় হাজিদের খেদমত করার নামে সেখানে গেলেও মূলত তাদের দ্বারা হাজিরা কোনো সহযোগিতা পান না। হাজিদের খেদমত করতে যাওয়া তথাকথিত ভিআইপি বিনা খরচের হাজিদের তাঁবু জামারার (রামি আল জামারাত) কাছাকাছি হওয়ায় এবং যানবাহন সুবিধা থাকায় তাদের মাত্র অল্প দূরত্বের পথ হাঁটতে হয়। বছরের পর বছর তা হয়ে আসছে যা ম্যাপেও সুস্পষ্ট। এ ছাড়া তাদের থাকার ব্যবস্থা আরামদায়ক, বিলাসিতাপূর্ণ কার্পেট বিছানো তাঁবুতে হয়ে থাকে, যেখানে উন্নতমানের খাবার, পর্যাপ্ত টয়লেট সুবিধার পাশাপাশি উপহার সামগ্রীসহ প্রতিদিন বিদেশি মুদ্রায় কয়েকশ ডলার দৈনিক ভাতারও প্রাপ্যতা রয়েছে। উপরন্তু হজ মিশনের কর্মকর্তারা অষ্টপ্রহর ভিআইপিদের সেবায় নিয়োজিত থাকে। এটি সুস্পষ্ট যে, এসব তথাকথিত ভিআইপি বিনা খরচের হাজিরা নীতি-নৈতিকতার সম্পূর্ণ বরখেলাপ করে হাজিদের সেবা করার পরিবর্তে নিজেরাই একপ্রকার বিলাসী সময় উপভোগ করেন। কখনো তাদের কাউকে সাধারণ হাজিদের তাবুতে আসতে, খবর নিতে বা নিদেনপক্ষে হেল্প ডেস্ক চালু করে খবর নিতে দেখা বা শোনা যায়নি।