চিকিৎসকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে বেধর মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনায় চিকিৎসকদের সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টারআশ্বাসের প্রেক্ষিতে তারা এ কর্মসূচি স্থগিত করেন।
রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়।
এর আগে, চার দফা দাবিতে সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে চিকিৎসকরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ঘোষিত দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও জানান তারা।
তারা বলেন, দেশের সকল জাতীয় বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশের সর্বস্তরের নার্সগণ ফ্রন্ট লাইনার হিসেবে নিরলসভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমকে সমুন্নত রেখেছেন। বিভিন্ন সময় চিকিৎসক-নার্সদেরকে তাদের কর্মস্থলে অতর্কিত হামলা এবং লাঞ্ছনার শিকার হওয়ার সত্ত্বেও রোগীদের স্বার্থে সার্বিক চিকিৎসা সেবা চলমান রেখেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক ও অন্যন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলায় একাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটে। যার প্রেক্ষিতে চিকিৎসকসহ হাসপাতালে সকল স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ভয়, অতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে।
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হলো :
১. হাসপাতালের মতো একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যে সকল ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের সকলকে চিহ্নিত করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
২. নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশের সকল স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিজিটর (ভিজিটর কার্ডধারী) ব্যতীত বহিরাগত ব্যক্তি বা মহল কোনোভাবেই হাসপাতালের ভেতর প্রবেশ করতে পারবে না, যাহা স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. হাসপাতালে রোগীর সেবা-প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসঙ্গতি/অবহেলা পরিলক্ষিত হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ প্রদানের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে। তবে, কোনোভাবেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, শনিবার (৩১ আগস্ট) নিউরো সার্জারি বিভাগের তিন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে সিসি টিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা। অন্যথায় ২৪ ঘণ্টা পর তারা কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
ওইদিন মধ্যরাতে খিলগাঁও সিপাহীবাগ এলাকা থেকে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহতরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিতে আসেন। পরে অন্য আরেক গ্রুপ চাপাতিসহ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ভেতরে ঢুকে যায়। এ সময় হাতেনাতে চারজনকে আটক করে সেনাবাহিনীর কাছে তুলে দেয় কর্তৃপক্ষ।
পরে অন্য আরেক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ওয়ান স্টপ ইমার্জেন্সি সেন্টারে ভাঙচুর চালায় রোগীর স্বজনরা।
নিরাপত্তা শঙ্কায় জরুরি বিভাগের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। দোষীদের শনাক্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের বিচারের দাবি জানান তারা। অন্যথায় কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন। পরে আল্টিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ হওয়ার আগেই কর্মবিরতিতে যান তারা।