বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৩৫, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪

আজ ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস

আজ ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস
গণঅভ্যুত্থান

আজ গণ-অভ্যুত্থান দিবস। বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মাইলফলক। ঊনসত্তরে মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের পক্ষে, জাতির মুক্তির সনদ খ্যাত ৬ দফা, পরবর্তীতে ছাত্র সমাজের দেয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিল এ গণঅভ্যুত্থান। দিবসটি পালন উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাঙালির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঊনসত্তরে গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতৃক ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ 'ছয় দফা' ভিত্তিক গণ-আন্দোলন এর আদর্শকে ধারণ করে অগ্রসরমান সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন এবং তারা 'এগারো দফা' দাবি ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬-দফাই ছিল এই ১১-দফা দাবির মূল ভিত্তি। ৬-দফা ভিত্তিক ১১-দফা দাবীতে ছাত্রসমাজের সমস্যাকেন্দ্রিক দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি স্থান পায় কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংক্রান্ত দাবিসমূহ। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দিদের মুক্তিই ছিল এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি। ৬-দফা এবং পরবর্তী ১১-দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয় ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। আর এর মাধ্যমে রচিত হয় বাংলাদেশে অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

প্রসঙ্গত, ৬৯-এর ১৭ জানুয়ারি ছাত্রনেতারা দেশব্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিলে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর মোনেম খান ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য জারি করে ১৪৪ ধারা। এই নিপীড়নের প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ২০ জানুয়ারি ছাত্রসভা ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (আসাদ)। ফলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়। শহীদ আসাদের মৃত্যুর পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি সৃষ্টি হয় অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের।

১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভেঙে করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে এদিন ঢাকায় সচিবালয়ের সামনে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর মতিউর রহমান এবং রুস্তম শহীদ হন। এর প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনতা আইয়ুব-মোনেম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তাদের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভার অফিসেও লাগায় আগুন। ফলে ঢাকার পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক বন্দি অবস্থায়  নিহত হলে প্রতিবাদমুখর হয় বাংলার জনগণ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা ১৮ ফেব্রুয়ারি নিহত হলে সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা। গণঅভ্যুত্থানের প্রবল চাপে পড়ে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তগণ এবং নিরাপত্তা আইনে আটক ৩৪ জন নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ২৩ ফেব্রুয়ারি লাখো জনতার উপস্থিতিতে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করে।

৬৯-এর এ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে। সে থেকেই ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
 

জনপ্রিয়