তিস্তা সমাধানে আশার কথা শোনালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের পরই তিস্তা সমস্যা নিয়ে সমাধানে পৌঁছানো যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
কলকাতার বাংলাদেশ উপহাই কমিশন প্রাঙ্গণে শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই আশা ব্যক্ত করেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের আমন্ত্রণে তিন দিনের ভারত সফরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি আসেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। সেখানে তিস্তাসহ অন্যান্য অমিমাংসিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে শুক্রবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তিস্তার পানিবন্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এ নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো অসুবিধা নেই। এখানে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজ্য (পশ্চিমবঙ্গ) সরকার। আমরা সেটি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা আশা করছি নিশ্চয়ই ভারতের নির্বাচনের পর এ নিয়ে একটা সমাধানে আমরা পৌঁছতে পারব এবং সেভাবেই আলোচনা হয়েছে।’
বহু প্রতীক্ষিত এই তিস্তা চুক্তির সমাধান করতে ভারত ও বাংলাদেশ সরকারের তরফে প্রচেষ্টা চালালেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনঢ় মনোভাবের কারণে তা বাস্তবে রূপ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে আলাদা করে কথা বলবেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন 'এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমাদেরকে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বাণিজ্য করতে হবে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এখন কিভাবে রাজ্য সরকারের সাথে বোঝাপড়া করবে সেটা কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়।'
এই সফরে ২০২৬ সালে গঙ্গার পানি বণ্টন নবায়ন করার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিন দিনের ভারত সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়, বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দিল্লি সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান 'ভারতের সঙ্গে আমাদের খুব আত্মিক ও উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যে সম্পর্ক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট, মিয়ানমার থেকে ভারত এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ সমাধানে কিভাবে একযোগে কাজ করা যায়, একই সাথে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কিভাবে ফেরত পাঠানো যায় সে ব্যাপারেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আরও বলেন 'পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, চিনিসহ একাধিক ভোগ্যপণ্যের জন্য বাংলাদেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল। সে দেশ থেকে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে। এই বিষয়টা নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের সাথে আলোচনা করেছি। সেক্ষেত্রে এ সমস্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য একটি কোটা নির্ধারণ করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামী মাসের রমজানের আগে পেঁয়াজ এবং চিনি যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি করতে পারি সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য কমানো নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়েও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।'
তবে বাংলাদেশের তিস্তার উপরে ব্যারেজ নির্মাণ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যদিও এই ব্যারেজের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে তা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'ভারতের সাথে ছিটমহল সমস্যা ছিল প্রায় ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আমরা সেটিকে সমাধান করতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে টাঙ্গাইল শাড়ির সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে।'