‘দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি হলে স্বাস্থ্যখাতে স্বনির্ভরতা আসবে’

দেশে চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃতের জন্য ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। তবে এসব যন্ত্রপাতির ব্যবহারকারীদের মধ্য থেকেই উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার আশা দেখছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান। তার মতে, দেশেই রি-এজেন্ট ও চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি হলে স্বাস্থ্যখাতে অনেকটাই স্বনির্ভরতা আসবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক ডায়াগনস্টিক মেডিকেল ইকুইপমেন্ট এক্সপো-২০২৫’-এ এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ডা. সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক ল্যাবরেটরিরই সক্ষমতা আছে। যারা নিয়মিত এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন, তাদের মধ্যে থেকেই অনেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারেন। চাইলে তারা দেশেই রি-এজেন্ট বা চিকিৎসা সরঞ্জাম বানাতে পারেন।’
স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে, সুযোগ নিচ্ছে বিদেশিরা
ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বেড়েই চলেছে। কারণ এই খাতে চাহিদা অনেক, মুনাফাও বেশি। তাই দেশি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা জরুরি। সবকিছু আমদানির ওপর ছেড়ে দিলে আমাদের স্বনির্ভরতা অর্জন সম্ভব হবে না।
‘বেসরকারি’ শব্দ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব
মেডিকেল কলেজ আইন থেকে ‘বেসরকারি’ শব্দটি তুলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তার ভাষায়, ‘সরকারি বা বেসরকারি—সব মেডিকেল কলেজ থেকেই ডাক্তার তৈরি হয়। সেবা দেয় মানুষকে। তাহলে আইন তৈরির সময় নামের শুরুতেই মালিকানা লিখে আলাদা করে দেখানোর প্রয়োজন নেই। মেডিকেল কলেজ মানে মেডিকেল কলেজ।’
মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘যেসব হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নেই, তারা যেন সেবা না দেয়। এটা নৈতিকভাবে ঠিক না। সেবার মান নিশ্চিত করতে হবে।’
স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনার কথা
সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও জানান ডা. সায়েদুর রহমান। তার মতে, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে প্রায়ই হামলা হয়। এতে পুরো স্বাস্থ্য খাত ঝুঁকিতে পড়ে। এ জন্য একটা ভালো আইন দরকার। এখন একটি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন হচ্ছে, যেখানে সেবাদানকারী ও গ্রহীতার উভয় পক্ষের দিক বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
ফার্মেসি যেন হাসপাতালের অংশ হয়
সরকারি হাসপাতালের পাশে আলাদা ওষুধের দোকানের পরিবর্তে হাসপাতালের অধীনেই একটি ফার্মেসি রাখার পক্ষে মত দেন তিনি। বলেন, বেসরকারি হাসপাতালেও যেন নিজস্ব ফার্মেসি থাকে, সেটা সরকার নিশ্চিত করতে চায়।
দেশে বাড়ছে খরচ, বাড়ছে অবকাঠামোও
অনুষ্ঠানে বলা হয়, ২০২৫ সালে মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় দাঁড়াবে ৬০ ডলার, যা ২০২০ সালের তুলনায় প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি। গত দুই দশকে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
চীন, জাপান, ভারত, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ২০০ কোম্পানি এ মেলায় অংশ নিচ্ছে। শুধু যন্ত্রপাতি দেখানোর জায়গা নয়, উদ্যোক্তা তৈরিতেও এই এক্সপো বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন আয়োজকরা।