আজ বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী

আজ ২০ ফেব্রুয়ারি, বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০২১ সালের এই দিনে ৮০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এই অভিনেতা ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর নোয়াখালীর দৌলতপুরে তার নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের ভোলাকোটে। শৈশব-কৈশোর কাটে পুরান ঢাকার দেবেন্দ্রনাথ দাস লেন এলাকায়। তিনি পড়াশোনা করেছেন পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুল, ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল এবং উচ্চশিক্ষা লাভ করেন জগন্নাথ কলেজ থেকে।
বিনোদন জগতে পারিবারিক কোনো সংযোগ না থাকলেও এটিএম শামসুজ্জামান নিজের ভবিষ্যৎ ঠিক করেছিলেন চলচ্চিত্রেই। ১৯৬১ সালে তিনি পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে খান আতাউর রহমান, কাজী জহির ও সুভাষ দত্তের মতো কিংবদন্তি পরিচালকদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন।
এটিএম শামসুজ্জামান কেবল অভিনেতাই নন, একজন সফল চিত্রনাট্যকারও ছিলেন। তার লেখা প্রথম সিনেমা ‘জলছবি’। এরপর তিনি শতাধিক সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা করেন।
অভিনয়ে তিনি প্রথমে কৌতুক চরিত্রে অভিনয় করলেও পরে খলনায়ক হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার কৌতুক অভিনেতা হিসেবে অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘জলছবি’, ‘যাদুর বাঁশি’, ‘রামের সুমতি’, ‘ম্যাডাম ফুলি’ ও ‘চুড়িওয়ালা’।
১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘নয়নমণি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে খল চরিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন। এরপর বহু বছর ধরে তিনি সফল খলনায়ক হিসেবে পর্দায় রাজত্ব করেন। উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্যে রয়েছে ‘অনন্ত প্রেম’, ‘দোলনা’, ‘অচেনা’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’ ও ‘চোরাবালি’।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বড় বউ’, ‘ওরা ১১ জন’, ‘লাঠিয়াল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘আমার স্বপ্ন তুমি’, ‘গেরিলা’, ‘লাল টিপ’ ইত্যাদি।
এটিএম শামসুজ্জামান পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন—তিনবার শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা, একবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা এবং একবার পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। এছাড়া, ২০১৫ সালে তিনি একুশে পদকে ভূষিত হন।
চলচ্চিত্রের পাশাপাশি এটিএম শামসুজ্জামান টিভি নাটকেও জনপ্রিয় ছিলেন। তার অভিনীত জনপ্রিয় নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘নোয়াশাল’, ‘ঘর কুটুম’, ‘বউ চুরি’, ‘মুরুব্বি জামাই’, ‘পিতা পুত্র’, ‘সেরা কিপ্টুস’, ‘নাপিত’, ‘গরু চোর’, ‘শতবর্ষে দাদাজান’ প্রভৃতি।
২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি, ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তাকে জুরাইন কবরস্থানে বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীরের পাশে সমাহিত করা হয়।
এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। তার কর্ম ও অবদান আজও দর্শকদের হৃদয়ে অমলিন।