শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমার শরীরের অংশ দেখা গেল সেটা বিষয় না, আমার রিয়েক্ট ওভার রিয়েক্ট!

আমার শরীরের অংশ দেখা গেল সেটা বিষয় না, আমার রিয়েক্ট ওভার রিয়েক্ট!
মৌসুমী হামিদ

সম্প্রতি ছোটপর্দার অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান টক অব দ্যা টাউন। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা। অভিনেত্রীর ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও নিয়েই সে আলোচনা। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে নেটিজেনদের মাঝে। 

অনেক অভিনেতা অভিনেত্রীই কথা বলেছেন বিষয়টি নিয়ে। এবার নিজের ফেসবুকে এ বিষয়ে পোস্ট দিয়েছেন মৌসুমী হামিদ। তিনি তুলে ধরেছেন তার জীবনে ঘটে যাওয়া বাস্তবতার কথা।

 

অভিনেত্রীর ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো- 

 

'সুটিং এ একটা ঘটনা শেয়ার করি, 

প্রায় ৩ বছর আগের কথা পুবাইল সুটিং করছি । বেশ রাত হয়েছে । কিন্তু অনেক কাজ বাকি। সাধারনত আমারা যখন সুটিং করি বিশেষ করে আউটডোর , তখন কাজের চাপ থাকে বেশি এবং সুটিং লোকেশন এবং মেকাপ রুম বা চেন্জ রুম বেশ দুরে হয় । বার বার দৌড়াদৌড়ি করে কাপড় পাল্টাতে বেশ কষ্ট হয় এবং সময় ও বেশি লাগে । রাত ১২.৩০ প্রায় ।আমি যেখানে সুটিং করছিলাম তার পাশেই একটা মাটির ঘর ছিল যে ঘরে লাইটের কিছু জিনিস পত্র রাখা ছিল । পরিচালক আমাকে খুব করে অনুরোধ করলেন বার বার মেকাপ রুমে যেয়ে চেন্জ করতে যেই সময় লাগছে সেই সময় টাও নেই , উনি বললেন আমি যদি অনুমতি দেই উনি আমার কাপড়ের ব্যাগ টা ঐ মাটির ঘরে আনার ব্যাবস্থা করবেন ওখানেই চেন্জ করতে পারব কিনা । আমি বললাম ঠিক আছে । যদিও সেই ঘরটা মোটেও আরামদায়ক বা সেইফ নয় । তার উপর দেখি ছিকানি ও নাই দরজায়। আমি বললাম তাহলে কিভাবে হবে ? 

তখন ক্যামেরায় যিনি ছিলেন উনাকে আমি মামা ডাকতাম উনি বললেন মামু তুমি টেনশন নিও না আমি আছি বাইরে পাহারা দিচ্ছি । আমি ওনার কথা বিশ্বাস করে ঐ মাটির ঘরে ঢুকি । সব জানলা বন্ধ করে দেই এবং দরজা চাপিয়ে দেই । 

আমি নিজেও শুনতে পাচ্ছিলাম ওনারা বাইরেই আছে কথাবার্তা বলছে । পরিচালক তখন সেটে বা অন্য কোথাও । 

শাড়ীটা পরা শুরু করি নাই তখনো । কি যেন মনে করে শাড়িটার ভাঁজ খুলে আমি পুরো শাড়ীটা ওড়নার মত কাঁধের উপর রেখে দেই এবং ঠিক তখনি লাইটের একটা ছেলে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ে । আমি চিৎকার দিয়ে উঠি “ এই চেইন্জ করি “!

খুবি অসস্তি কর অবস্থা। ছেলে টা প্রচন্ড ভয় পেয়ে বের হয়ে গেল। সরি আপু আমি জানতাম না আপনি ছিলেন। 

তখন প্রচন্ড রাগ হল মামার উপর । চিৎকার দিলাম একটা । আমি শুধু মাত্র সহযোগিতা করার জন্য এমন একটা জায়গায় কাপড় পাল্টাতে রাজি হলাম কারন আমাকে কথা দেওয়া হয়েছিল বাহিরে একজন দায়িত্ব নিয়ে পাহারা দিবে । কিন্তু ছেলেটা উঠান পার হয়ে ঘরে ঢুকে গেল কেউ ওরে বলল না যে ঘরে আমি আছি । 

আমি যখন ঘরের ভিতর থেকেই চিৎকার করছি ইউনিটের উপর তাদের দায়িত্বহীনতা নিয়ে তখন সেই মামা ( চিত্রগ্রাহক) বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলেন “ আরে বাদ দে তো ও তো ঢুকেই বের হইয়া আসছে এইটুকু সময় আর কি দেখছে । ঐ ছেলে টাকে উদ্দেশ্য করে বললো “ঐ তুই কিছু দেখছোস”? বলে অসভ্যর মত হাসতে লাগলো। ছেলেটা কোন উত্তর দিল না। 

আমার শরিরের যত খানি অংশ দেখা গেছে সেটা তেমন কোন বিষয়ই না । আমি নাকি ওভার রিএক্ট করছি । 

এইকথা শোনার পর আমি বের হয়ে জীবনের সর্বোচ্চ রিএক্ট সেদিন করেছি সেটে । আমার কলিগের কাছে আমার “ সম্ভ্রম” এতটা তুচ্ছ ? পরিবার ছেড়ে দিনের বেশিরভাগ সময় যাঁদের সাথে কাজ করি তারা এই ভাবে তাদের দায়িত্বহীনতা জাস্টিফাই করবে ? 

সেটের বেশির ভাগ মানুষের কাছে মনে হয়েছে “ দায়িত্ব নেওয়ার পরও নির্লজ্জের মত ওনার ঐ খ্যাক খ্যাক হাসায় আমি যে রিএকশন দিয়েছি সেটা বেশি বেশি ছিল । সবাই তার একশন কেই জাস্টিফাই করে গেল । 

কিন্তু পরিচালক আমার চিৎকার শুনে সেখানে এসে পুরো ঘটনা শুনে ঐ চিত্রগ্রাহকে সেট থেকে বের করে দেন। এবং উনি নিজেও ভুল বুঝতে পেরে সরি বলেন। 

আমি পুরো ঘটনা ওনাকে বলে ওনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম “ তোমার পরিবারের কোন মেয়ে এমন অবস্থায় পড়লে দায়িত্ব রত মানুষ টা দায়িত্ব পালন না করে উল্টা যদি এমন করে রসায় রসায় হাসত,তারপর প্রচন্ড অপমান বোধে যদি তোমার নিজের মেয়ে বা বোন বা তোমার বউ যদি রিএক্ট করত 

তুমি কি বলতা তোমার মেয়ে কে “ মামনি ওভার রিএক্ট করতেছো কেন ? 

আমি বেশি অবাক হয়েছিলাম সেটে ঐদিন ঐ চিত্রগ্রাহকের দায়িত্বহিনতা ও অসভ্যতা কে যারা জাস্টিফাই করছিলেন তাদের উপর।  

এবং আবারো অবাক হয়েছি যারা আয়মান সাদিয়ার ভিডিও দেখে পোস্ট করেছেন “ ভিডিও তে তো তেমন কিছুই দেখা যায় নাই “তাদের উপর ।

যিনি ভিডিও টি পোস্ট করেছেন তার জন্যে আমার কিছুই বলার নাই । উনি ভিডিও ডিলিটও করেছেন।আমি সাধুবাদ জানাই ।কিন্তু সর্বনাশ যা হওয়ার তো হয়ে গেছে । ভিডিও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে ।এবং মানুষের ট্রলিং। কারন আমি ওনাকে যতটুকু চিনি উনি একদমই ক্ষতিকারক মানুষ নন। বেশ বন্ধু সুলভ হাস্যজ্জল এবং প্রচন্ড পরোপকারি মানুষ। আমি বিশ্বাস করতে চাইনা উনি উদ্দেশ্য প্রনোদিত হয়ে এমন কাজ টা করেছেন। লুকিয়ে বা গোপন ক্যামেরায় তো নয়ই। বরং উনি অনুতপ্তই হয়েছেন বলে আমি মনে করি। 

কিন্তু যারা বলছেন “ এই ভিডিওতে তেমন কিছুই দেখা যায় নাই তাদের জন্য প্রশ্ন আছে,

এই তেমন কিছুই না দেখা ভিডিওটির কারনে যে পরিমান নোংরা , অসভ্যতা, বুলিং, বডি সেইম, রেইপ থ্রেট মেয়েটাকে সহ্য করতে হয়েছে বা এখনো হচ্ছে সেটা যদি আপনার পরিবারের কোন মেয়েকে সহ্য করতে হয় , আপনি সেটা দেখার জন্য প্রস্তুত আছেন তো ?'

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়