বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :

প্রকাশিত: ২২:১৮, ৩ মার্চ ২০২৫

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদের তিন বিভাগে নেই স্নাতকোত্তর

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদের তিন বিভাগে নেই স্নাতকোত্তর
সংগৃহীত

শিক্ষা একটি জাতির মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু যখন উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়, তখন শিক্ষার্থীদের জন্য তা বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের তিনটি বিভাগ—পরিসংখ্যান, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং  এবং এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং —এ এখনো স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) প্রোগ্রাম চালু হয়নি। শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, যা সময় ও ব্যয়ের পাশাপাশি ক্যারিয়ারে পিছিয়ে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, অন্যান্য বিভাগে স্নাতকোত্তর চালু থাকলেও উল্লেখিত তিন বিভাগে এখনো স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাঠক্রম শুরু হয়নি। এর প্রধান কারণ শিক্ষকসংকট। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত সাধারণত ১:২০ হওয়া উচিত হলেও, পরিসংখ্যান বিভাগে তা ১:৫৩, ইইই বিভাগে ১:২৩। ফলে বিদ্যমান শিক্ষকদের ওপর বাড়তি চাপ থাকায় নতুন প্রোগ্রাম চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ইইই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ তানভীর হাসান খন্দকার জানান, যেখানে স্নাতক শেষ করতে চার বছর লাগে, সেখানে আমাদের ছয় বছর লেগেছে। আমাদের বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, শিক্ষক সংকটের কারণে এখনই স্নাতকোত্তর চালু সম্ভব নয়, তবে আমরা চাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। স্নাতকোত্তর চালু না থাকায় আমরা প্রায় তিন বছর পিছিয়ে পড়ছি, যা আমাদের ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও আমাদের বিভাগে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম না থাকায় আমরা গবেষণা প্রকল্পের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করতে পারছি না। ফলে আমাদের ব্যাক্তিগত অর্থায়নে গবেষণা করতে হচ্ছে। স্নাতকোত্তর থাকলে আমরা প্রতি দুই বছরে দুটি গবেষণা প্রস্তাবনা জমা দিতে পারতাম এবং অনুমোদন পেলে আনুষ্ঠানিকভাবে গবেষণা পরিচালনা করতে পারতাম। কিন্তু স্নাতকোত্তর না থাকার ফলে আমরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

এ ব্যাপারে পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতক সম্পন্ন করা ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সানমুন হাগিদক বলেন, আমরা স্নাতকের চতুর্থ বর্ষে এসে জানতে পারি, আমাদের স্নাতকোত্তর চালু করা হবেনা। স্নাতকোত্তর না করতে পারার ফলে আমরা যেসব জটিলতায় এখনো ভুগছি, আমি চাইনা পরবর্তী ব্যাচগুলোর ক্ষেত্রেও এমন ঘটুক। তাই পরিসংখ্যান বিভাগসহ প্রত্যেকটি দ্রুত স্নাতকোত্তর চালু করার দাবি জানাচ্ছি।

ইএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ অমিত হাসান বলেন, আমাদের এখানে স্নাতকোত্তর না থাকায় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করার ক্ষেত্রে ভর্তি জটিলতা ও সময় বেশি লেগে যাচ্ছে । এছাড়াও শেষ সেমিস্টারের পর আমাদের ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হয় । কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ১ বছর লেগে যায় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন ধরার ক্ষেত্রে। এমন জটিলতার মাঝে অনেকে স্নাতকোত্তর শিক্ষায় প্রবেশ না করেই তার শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটাচ্ছে ।

এক্ষেত্রে পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোছা. তাওয়াবুন্নাহার রুপা বলেন, আমাদের মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঁচটি ব্যাচ পরিচালনা করতে হচ্ছে।  স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু হলে ল্যাব ও থিসিসের বাড়তি দায়িত্ব সামলানো কঠিন হবে। তবে প্রশাসন আমাদের দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছে। নতুন শিক্ষক নিয়োগ হলে আমরা কারিকুলাম তৈরি করে অনুমোদনের জন্য আবেদন করব।

বিভাগে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু না হওয়ার কারণ সম্পর্কে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আলী আজগর জানান, আমাদের বিভাগে এখনো স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু হয়নি, মূলত এটি একটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ হওয়ায় স্নাতক ডিগ্রিই চাকরির জন্য যথেষ্ট। যদিও কিছু প্রতিষ্ঠানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রয়োজন হয়, তবে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা সাধারণত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগগুলোতে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম হয়। বর্তমানে আমাদের শিক্ষকসংখ্যা কম, যা স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালুর বড় চ্যালেঞ্জ। এখনই চালু করলে স্নাতক পর্যায়ে সেশনজটের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তবে স্নাতকোত্তর চালু হলে গবেষণার সুযোগ বাড়বে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও উপকারী হবে। একাডেমিক কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং উপাচার্য স্যার আশ্বাস দিয়েছেন যে, শিক্ষকসংখ্যা বাড়ানো হলে দ্রুতই  স্নাতকোত্তর চালু করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন ড. এ এইচ এম কামাল জানান, ডিন হওয়ার আগেই আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম  চালুর পরামর্শ দিয়েছিলাম। শিক্ষক সংকটই মূল সমস্যা। বিভাগগুলো পদশূন্যতার ভিত্তিতে প্রশাসনের নিকট আবেদন করলে প্রশাসন  সার্কুলার করবে। যেহেতু এখনো সার্কুলার প্রকাশিত হয় নাই তার মানে প্রক্রিয়া এখনো চলমান আছে, আমরা চাই দ্রুত স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু হোক।

শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। শিক্ষক সংকট নিরসন করার জন্য ইউজিসিকে জানিয়েছি। অনুমোদন পেলেই শিক্ষক নিয়োগ হবে এবং  স্নাতকোত্তর চালু করা সম্ভব হবে

শিক্ষার্থীরা মনে করেন পরিকল্পিত ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু করা সম্ভব এবং আশা করছেন, দ্রুত স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু হলে তারা উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হবে না। প্রশাসনের কার্যকরী উদ্যোগই এখন তাদের একমাত্র ভরসা।

জনপ্রিয়