গোবিপ্রবির সাবেক উপাচার্যসহ চার জনের নামে দুদকের মামলা

অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ায় গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (গোবিপ্রবি) এর সাবেক উপাচার্যসহ চার জনের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রবিবার (২ রা মার্চ) সকাল ১১.৩০ মিনিটে গোপালগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় বাদী হয়ে করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়," গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জের স্মারক নং ৭৬৩, তারিখ: ২০-০৯-২০১৮ খ্রি. প্রশাসনিক কর্মকর্তার ১৬টি পদসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ১৬টি শূন্য পদের স্থলে আসামী শারমিন চৌধুরীসহ ২০ জনকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেয়া হয়। উক্ত পদে ৮৭০ জন আবেদকারীর ডাটা শীট যাতে তৎকালীন ভিসি ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের স্বাক্ষর রয়েছে। জব্দপূর্বক পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, উক্ত তালিকায় আসামী শারমিন চৌধুরী'র নাম নাই। তাছাড়া নিয়োগ কমিটির সুপারিশে তালিকার ৮৭৩ নম্বর ক্রমিকের শারমিন চৌধুরী-কে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হলেও বাস্তবে ৮৭৩ নম্বর ক্রমিক ডাটা শীটে নাই। অর্থাৎ আবেদন তথা তালিকায় না থাকার পরও জাল-জালিয়াতিপূর্ণভাবে তাকে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ছিল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখে প্রার্থীর বয়স ৩২ বছর হওয়ার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে আসামী শারমিন চৌধুরী বয়স ৩২ বছরের বেশি ছিল। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় ২০-০৯-২০১৮ খ্রি. তারিখে, শারমিন চৌধুর'র জন্ম তারিখ: ২০-০৬-১৯৮৫ খ্রি.। অর্থাৎ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখে তার বয়স ৩৩ বছর ৩ মাস ছিল। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আসামী শারমিন চৌধুরী বয়স ৩২ বছরের স্থলে ৩৩ বছর ৩ মাস থাকার পরও বে-আইনিভাবে নিয়োগ, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ১৬টি শূন্য পদের স্থলে ২০ জনকে নিয়োগ ও ডাটা শীটে নাম না থাকার পরও নিয়োগ দিয়ে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে।"
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, " সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন, রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. মোশারফ আলী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সাবেক অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল মান্নান এবং বর্তমান সেকশন অফিসার শারমিন চৌধুরী অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করত। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তের চেয়ে বয়স বেশী, বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ১৬টি শূন্য পদের স্থলে ২০ জনকে নিয়োগ ও ডাটাশীটে আবেদনকারীর নাম না থাকার পরও আসামী শারমিন চৌধুরীকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের সুপারিশ ও নিয়োগ প্রদান করে দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন, বিধায় তাদের বিরুদ্ধে একটি নিয়মিত মামলা রুজু করার জন্য অনুরোধ করা হলো।"
এছাড়া মামলা তদন্তকালে ঘটনার সাথে অন্যান্য ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে বা তাদেরকে আইনামলে আনা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলার বিষয়ে জানার জন্য গোপালগঞ্জ জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় বলেন, " এই বিষয়ে আমরা বিস্তারিত প্রেসরিলিজেই জানিয়েছি। যেহেতু এটা তদন্তাধীন আছে তাই এই বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। "
ইতিপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে দুদকের অভিযানের সময় পাওয়া দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, " আমরা এক সাথে একাধিক বিষয়ে কাজ করছি। সময় হলে আপনারা সব জানতে পারবেন।"
উল্লেখ্য, গত ১২ জানুয়ারী বিভিন্ন অনিয়ম ও অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালান দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল। অভিযানে তারা বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পায় বলে সে সময়ে উল্লেখ করেন তারা।