রোববার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি
সংগৃহীত

লাইব্রেরি কেবল বইয়ের সংগ্রহশালা নয়, এটি জ্ঞানের সমুদ্র—যেখানে পাঠকেরা গভীর মনোযোগে ডুব দেন এই সমুদ্রে। এখানে নেই কোনো কোলাহল, বরং রয়েছে চিন্তার প্রতিধ্বনি। বইয়ের পাতার মৃদু শব্দ, কলমের নীরব চলাচল, আর মনোযোগী দৃষ্টির অদৃশ্য ভাষাই এখানে মুখ্য। 

লাইব্রেরির নীরবতা নিছক শব্দহীনতা নয়; এটি মননশীলতার উন্মোচন, আত্মস্থ হওয়ার সুযোগ এবং গভীর মনোযোগের প্রতিচিত্র। প্রকৃত পাঠক এই নীরবতার মাঝে জ্ঞানের আস্বাদ গ্রহণ করেন এবং নতুন চিন্তার জন্ম দেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও লাইব্রেরির পরিবেশে বসলে সময় যেন ধীর হয়ে আসে, চারপাশের দুশ্চিন্তা মিলিয়ে যায়, আর টিকে থাকে কেবল জ্ঞানার্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা। 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, একটি নিস্তব্ধ জ্ঞানতীর্থ, যেখানে প্রতিদিনই বইপ্রেমী শিক্ষার্থীরা ভিড় করেন। কেউ পাঠ্যপুস্তকে ডুবে থাকেন, কেউ গবেষণাপত্র নিয়ে ব্যস্ত, আবার কেউ কেবল জানার তৃষ্ণা মেটাতে শব্দের জগতে হারিয়ে যান। এখানে শব্দ নেই, কিন্তু চিন্তার শব্দ যেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে প্রতিধ্বনিত হয়। প্রতিটি পৃষ্ঠা উল্টানোর শব্দ, কলমের নীরব খসখসানি যা হয়ে উঠে জ্ঞানের মৃদু সঙ্গীত। 

প্রায় ৪০ হাজার বই ও পত্রপত্রিকার সংগ্রহ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি অবস্থিত। এখানে প্রথম দুই তলা বইয়ের সংরক্ষণ এবং ৩য় তলায় শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বই নিয়ে পড়ার জন্য নির্ধারিত। লাইব্রেরির প্রবেশদ্বার পেরোলেই পরিবেশের পরিবর্তন ঘটে—বাইরের কোলাহল এখানে প্রবেশ করতে পারে না। দেয়ালঘেরা এই শান্ত দুনিয়ায় বইয়ের পাতায় জ্ঞানের স্রোত বয়ে চলে। শিক্ষার্থীরা কেউ একাগ্রচিত্তে বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে চলেছেন, কেউ দ্রুত হাতে নোট নিচ্ছেন, এবং প্রতিটি টেবিলে চলছে জ্ঞানের উৎসব—কেউ একা, কেউ দলগতভাবে পড়াশোনা করছেন। 

লাইব্রেরির নিয়মিত পাঠক হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম ফয়সাল। লাইব্রেরিতে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, লাইব্রেরির পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম ও শান্ত, যা একাগ্রচিত্তে অধ্যয়নের জন্য উপযুক্ত। এখানে বসে নিরিবিলি সময় কাটানোর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় রেফারেন্স বই পড়ে জ্ঞান সমৃদ্ধ করার সুযোগ পাই। বাসার তুলনায় লাইব্রেরির পরিবেশ অনেক বেশি শান্তশিষ্ট, যা আমার মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক। এছাড়াও এখানে জব সেক্টরের বই ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পাওয়া যায়, যেগুলো পড়ে আমরা আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারি। 

লাইব্রেরির গুরুত্ব নিয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম ইসলাম বলেন, লাইব্রেরির নির্জন পরিবেশে পড়াশোনা করলে মেধার বিকাশ ঘটে। এখানে নানা ধরনের সাহিত্যিক বই রয়েছে, যেগুলো পড়লে শুধুমাত্র একাডেমিক জ্ঞান নয়, বরং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন জ্ঞান অর্জন করা যায়। 

আরেক শিক্ষার্থী জানান, লাইব্রেরি একটি কোলাহলমুক্ত পরিবেশ, যেখানে পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়। যখনই প্রয়োজন হয়, আমি লাইব্রেরিতে এসে পড়াশোনা করি। রুমের তুলনায় লাইব্রেরিতে পড়তে আমার বেশি ভালো লাগে, কারণ এর নিরিবিলি পরিবেশ আমার মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, লাইব্রেরির কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা অমিত সম্ভাবনাকে হ্রাস করতে পারে। বিশেষ করে, পাঠক স্বল্পতা বা পাঠক বৃদ্ধি না পাওয়া৷ এছাড়া বইয়ের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন এবং নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের বই সহজলভ্য করা উচিত। অনেক বিভাগের একাডেমিক বইয়ের সংখ্যা কম ও চাকরির প্রস্তুতির বইয়ের ক্ষেত্রে অভাব রয়েছে জানিয়ে মতামত দেন অনেকে। 

কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারিক ড. মোহা. আজিজুর রহমান বলেন, লাইব্রেরি একটি জ্ঞানের সমুদ্র, যেখানে নির্জন পরিবেশ শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখতে সহায়তা করে, ফলে তারা গভীরভাবে পড়তে ও চিন্তা করতে পারেন। লাইব্রেরির সংকট নিয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। ৩য় তলায় শিক্ষার্থীদের জন্য পর্দা দিয়ে নিরিবিলি পড়ার জায়গা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা ও নামাজের জন্য পৃথক স্থান থাকবে। 

তিনি আরও বলেন, লাইব্রেরির একটি কর্ণারে ম্যাগাজিন, জার্নাল ও গবেষণাপত্র রাখা হবে এবং ই-রিসোর্স ও তথ্যসেবা বৃদ্ধি করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই লাইব্রেরি থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে। বইয়ের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যও আমরা কাজ করছি এবং খুব শীঘ্রই এই ব্যবস্থা করা হবে। এসির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি, যদিও এটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। আরও অনেক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, এবং আমাদের লক্ষ্য লাইব্রেরিটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা। আশা করি এসব কাজ শীঘ্রই সম্পন্ন করতে পারবো।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়