নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে কুয়াশা উৎসবের রঙে রাঙানো দুইদিন

"শিশিরের মতো নির্মল হও প্রাণ, কুয়াশায় ভিজে মুক্ত অনির্বাণ"—এই স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো “কুয়াশা উৎসব ১৪৩১”। ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি, দুই দিনব্যাপী আয়োজিত এ উৎসবের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল আনন্দমুখর ও উৎসবমুখর। শীত মানেই কুয়াশার আবরণে মোড়ানো প্রকৃতি, শিশির ভেজা ঘাস, আর শীতের আমেজ—এই আবহকে ধারণ করেই উৎসবটির নামকরণ করা হয়েছে “কুয়াশা উৎসব”।
উৎসবের প্রথম দিন, ৭ ফেব্রুয়ারি, কুয়াশা ঢাকা ভোরে রাগ সংগীতের মধ্য দিয়ে আয়োজনের শুভ সূচনা হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় শীতকালীন বাংলার ঐতিহ্যের অংশ পিঠাপুলির আসর। দ্বিতীয় পর্বে ছিল উদ্বোধনী আগুন প্রজ্বলন, নজরুল শ্রদ্ধাঞ্জলি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, লোকনৃত্য, ঘাটু গান এবং বিশেষ পরিবেশনা “অভিক নৃ”।
৮ ফেব্রুয়ারি উৎসবের প্রথম পর্বে ছিল যন্ত্র সংগীত ও পিঠাপুলির আসর। দ্বিতীয় পর্বে স্বরচিত কবিতা পাঠ, আদিবাসী নৃত্য, ক্যাম্পাসের গানের দলের পরিবেশনা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং কানিজ খন্দকার মিতুর গান পরিবেশিত হয়। এরপর মাদলের গান। সবশেষে সমাপনী কীর্তনের মধ্য দিয়ে উৎসবের পর্দা নামানো হয়। ক্যাম্পাসের নজরুল বেদী, চুরুলিয়া মঞ্চ, জয়ধ্বনি মঞ্চ এবং আদিবাসী জোনে এসব আয়োজন সম্পন্ন হয়।
কেন্দ্রীয় মাঠে শিক্ষার্থীরা বাহারি পিঠা-পুলি ও নানান সাজসজ্জার সামগ্রী নিয়ে মনোমুগ্ধকর স্টল সাজিয়ে তোলে। এবারও উৎসবটি পরিচালিত হয়েছে “উৎসব বন্ধু নিবন্ধন” প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যেখানে অংশগ্রহণকারীরা স্বেচ্ছায় অনুদান দিয়ে উৎসবকে সফল করে তুলেছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীসহ নানা বয়স ও পেশার মানুষ এসেছিলেন এই আয়োজন উপভোগ করতে। তাদের সরব উপস্থিতিতে উৎসবের আবহ হয়ে উঠেছিল আরও প্রাণবন্ত।
ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও অভিনেতা মনোজ কুমার প্রামাণিক বলেন, মূলত শিক্ষার্থী, শিক্ষক সকলের উদ্যোগে প্রতিবার কুয়াশা উৎসব আয়োজন করা হয়৷ এবারও সেভাবেই পুরো আয়োজনটুকু করা হয়েছে। এবার আয়োজনের ব্যপ্তি আরো বেড়েছে, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গাকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে সুন্দরভাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, পুরো ক্যাম্পাস জুড়েই এবারের কুয়াশা উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবাই উৎসবে মেতে উঠেছে। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা প্রক্টরিয়াল বডি তৎপর রয়েছি। এছাড়াও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আনসার সদস্যরা কাজ করছেন।
কুয়াশার মায়াময় চাদরে মোড়ানো এই উৎসব শুধু বিনোদন নয়, বরং বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুন করে উপলব্ধির এক অনন্য উপলক্ষ। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আয়োজন নতুন প্রজন্মকে তাদের শেকড়ের টান আরও গভীরভাবে অনুভব করিয়ে দেয়, যা এক সময় তাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে গড়ে তুলবে।