নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ’দ্যা রুলস অব লাভ’ নাটকের মঞ্চায়ন
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্চস্থ হলো এলিফ শাফাক এবং নাইজেল ওয়াটসের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি নাটক 'দ্যা রুলস অব লাভ'। এটি নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ৪র্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের 'অভিনয় অনুশীলন' কোর্সের অংশ হিসেবে প্রদর্শিত হচ্ছে।
নাটকটি ১ ডিসেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে কলা ভবনের নিচতলায় নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের জিয়া হায়দার ল্যাবে প্রদর্শিত হবে। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মেহেদী তানজির। এটি মূলত দুটি ভিন্ন সময়ের প্রেক্ষাপটকে একত্রিত করে, যেখানে ভালোবাসা, মুক্তি এবং আত্মঅবদান এর মধ্য দিয়ে চরিত্রগুলো একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়। নাটকের মূল গল্পটি রুমি ও শামসের বন্ধুত্ব-বিচ্ছেদ এবং এলা রুবিনস্টাইনের পরিবারের ভালোবাসার গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।
এলিফ শাফাকের ‘ভালবাসার ৪০ নিয়ম’ এবং নাইজেল ওয়াটসের ‘দ্যা ওয়ে অব লাভ’ উপন্যাস দুটি এই নাটকের জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। এ নাটকে ২০২৪ সালে এক ইহুদী নারী এবং সুফি সাধকের সম্পর্কের গভীরতা এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শামস-ই তাবরিজের সঙ্গে রুমির একাত্মতা তুলে ধরা হয়েছে। নাটকটির কাহিনীতে উঠে এসেছে, কীভাবে একটি ইহুদি নারী ও একজন সুফি সাধকের মধ্যে গড়ে ওঠে এক হৃদ্যতা, যা পরবর্তীতে সুফিবাদ এবং ভালোবাসার প্রতি তাদের অদ্ভুত এক সম্পর্ক তৈরি করে। অন্যদিকে, ত্রয়োদশ শতাব্দীর শামস-ই তাবরিজের সাথে রুমির একাত্মতা রুমিকে একজন শরিয়তপন্থী মাওলানা থেকে ভালোবাসার কবি হিসেবে পরিণত করে তোলে। মূলত, এই নাটকটি দুটি ভিন্ন সময়ের ও পরিস্থিতির মানুষের জীবনে সৃষ্টিকর্তার প্রেমে একাত্ম হওয়ার গল্প নিয়ে তৈরি। এটি দর্শকদের অভ্যন্তরীণ আত্ম-উন্নয়ন ও মুক্তির পথ অনুসন্ধান করতে উদ্বুদ্ধ করবে।
নাটকটির নির্দেশক মো. মেহেদী তানজির জানান, জীবনের নানান সংকট এবং অপ্রাপ্তির গ্লানি মানুষের আত্মমুক্তির পথ প্রতিনিয়ত অবরুদ্ধ করে ফেলে। মানুষের জন্য শুধুমাত্র পাকস্থলী পূর্ণ করাই মূখ্য নয়। সত্য পথের অনুসন্ধান একান্ত অপরিহার্য। সত্যের পথ অনুসন্ধানে আমাদের নাটকটি হাতিয়ার করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। মূলত সূফি দর্শনের মাধ্যমে জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে এলিফ শাফেকের ‘ভালবাসার ৪০ নিয়ম’ উপন্যাসটি গভীরভাবে নাড়া দেয়। পরবর্তীতে নাইজেল ওয়াটসের ‘দ্যা ওয়ে অব লাভ’ উপন্যাসটি রুমির জীবনের সূক্ষ্মতর উপস্থাপনে সহায়তা করেছে। দুইটি উপন্যাসের মেলবন্ধনে নিজেদের ঐকান্তিক প্রয়াস হয়ে উঠেছে এই নাটকটি।
নাটক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সমসাময়িক মানুষের জীবন সংকট থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর জীবন সংকট এবং ঈশ্বর প্রাপ্তির তুলনামূলক মেলবন্ধন ঘটে এই নাটকের মাধ্যমে। প্যারালাল জার্নির মাধ্যমে এলা রুবিন্সটাইন এবং রুমির গন্তব্য এক পথে এসে দাঁড়ায়। ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং অধ্যাত্মিক চর্চার মধ্যদিয়ে এই যাত্রা আপ্লূত করে আমাদের। সমসাময়িক জীবনের অস্থিরতা থেকে দূরে এসে আত্মোপলব্ধির এই যাত্রা ভিন্ন জীবনদর্শনে মোহিত করে, জীবনকে নতুন করে উপলব্ধির পথ সন্ধান দেয়। আমাদের কাছে প্রযোজনাটির সফলতা কিংবা ব্যর্থতার বাইরে এসে এর নির্মাণ প্রক্রিয়াটি একান্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নাট্য উপস্থাপনের জন্য পুরো দলের ঐকান্তিক ইচ্ছা এই স্বল্প সময় এবং আর্থিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্ব রাখেনি। জাকজমকপূর্ণ উপস্থাপনের বিপরীতে স্বল্প উপাদান এবং মোহগ্রস্থতার বদলে মেডিটেটিভ অভিনয় ও গল্প বলার সরল মাধ্যমই প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠে।
নাটকটি মঞ্চায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও পরিবেশনা বিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শাকিল আহমেদ, রাফেল আফ্রাদ, পল্পব বিশ্বাস, জাফরিন হক তরু, শাহিন আলম, ফাতেমা তুজ যাহরা/ ইশরাত জান্নাত, মনীষা সাহা, হাবিবা আক্তার পিংকি, সামিয়া সুলতানা চারু, সুমাইয়া খান কানিজ, লাবনী রানী পন্ডিত, আফিয়া জাহান প্রার্থনা, ফারহানা আমবেরিন লিওনা, তৃপ্তি রানী রায়, পিপাসা সাহা গৌরী ও প্রিয়াঙ্কা রানী দাসসহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
নাটকের সৃজনশীলতার জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন স্ক্রিপ্ট এডিটিংয়ে হাবিবা আক্তার পিংকি ও জাফরিন হক তরু, পরিকল্পনা সহযোগী খাইরুল বাশার, পোস্টার ডিজাইনে মাসুম হাওলাদার, আলোক প্রক্ষেপণে মোল্লা আলভী মাহমুদ, ইব্রাহিম খলিল আপেল, দেবজয় চক্রবর্তী, সংগীত প্রয়োগে মো. হাসান মিয়া, নুর এ হাসানাত লিসা, এবং প্রজেকশনে শাশ্বত গোলদার।