নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র-জুনিয়র সংঘর্ষ
জুনিয়রের সাথে বসাকে কেন্দ্র করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন বিভাগের সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসাথে ১৬ তম ব্যাচ এবং হামলায় অভিযুক্ত অন্যান্যদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভাগটি।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইরফান আজিজকে সভাপতি এবং প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমানকে সদস্য সচিব করে এই কমিটি গঠন করা হয়।
এছাড়া, বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক মো. আশরাফুল আলম তদন্ত কমিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কমিটিকে তদন্তপূর্বক লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য ১০ কার্যদিবসের সময় দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের (১৮ তম ব্যাচ) নবীন শিক্ষার্থীদের সাথে বসাকে কেন্দ্র করে বিবাদে জড়ান দর্শন বিভাগের ২০২১-২২ (১৬ তম ব্যাচ) ও ২০২২-২৩ (১৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ঘটনাটি বিভাগের সিনিয়রদের জানালে তারা বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সমাধানে সম্মতি না জানালে, গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বিষয়টির সমাধান হয়।
তবে ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সমাধান পছন্দ না হওয়ায়, বুধবার (২৭ নভেম্বর) পুনরায় বিভাগের শিক্ষকদের উপস্থিতিতে আলোচনায় বসেন তারা। আলোচনা চলাকালীন, ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সিনিয়রদের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন। এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, বিভাগীয় প্রধান মো. তারিফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বাইরে যেতে বলেন। পরে, সিনিয়র শিক্ষার্থীদেরকে আবারও বিভাগে আসতে বলা হলে, ১৬ তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। এই ঘটনায় নারী শিক্ষার্থীসহ তিনজন আহত হন।
বিভাগটির ১৩ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবির বলেন, ১৬ ও ১৭ ব্যাচের মনোমালিন্যের বিষয়টি সমাধানের জন্য পুনরায় বিভাগে বসা হলে শিক্ষকদের সামনেই ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আবারও সিনিয়রদের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে। এরপর আমরা বের হয়ে যাই। কিছুক্ষণ পর বিভাগীয় প্রধান আমাদের বিভাগে আসতে বললে ১ নং গেট সংলগ্ন রাস্তায় ১৬ ব্যাচের রাসেল, রোহান, আসিফ, সাজিদ, আবিদ এবং ১৭ ব্যাচের মোস্তাফিজ, নীরব, ফাহাদ, লাবিব এবং নিশাতসহ বহিরাগতদের নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে।
এ বিষয়ে ১৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইবনাত জানান, আমরা ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় ১৬ ব্যাচের সিনিয়ররা আমাদের মারার জন্য ঔদ্ধত্য হয় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করে। শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ১৬ ব্যাচের অধিকাংশ স্থানীয় হওয়ায় তারা ক্ষমতার জোর দেখিয়ে বিভিন্ন সময় এলাকায় দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এছাড়াও সুযোগ পেলেই ছাত্রলীগ-শিবিরের ট্যাগ দিয়ে মারধরের হুমকিও দেয়।
অন্যদিকে, ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাসেল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দর্শন বিভাগের ছাত্রলীগ নেতা পারভেজ, শান্ত, প্রান্তসহ আরো অনেকেই আমাকে নানাভাবে হয়রানি করে এবং মারধরের হুমকি দেয়। হলের রুম থেকেও বের করে দেয়। ৫ আগস্টের পর তারা আবারো সক্রিয় হয়ে এখন তারা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিরুদ্ধে মতবিরোধ পোষণ করতে থাকে। আমাদের সব ব্যাচের মতবিনিময় ছিলো, সেখানেও তারা আমাদের আক্রমণ করতে আসে। এরপর আমরা ১নং গেটের দিকে যাওয়ার সময় আমাদের ওপরও হামলা করে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ১৬ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আক্রমণের কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা বিভাগীয়ভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হচ্ছে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্রও জমা দেওয়া হয়েছে।ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগের স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখাসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ১৬তম ব্যাচ এবং হামলায় অভিযুক্ত বিভাগের অন্যান্যদের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বিভাগটির সিনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। জুনিয়র শিক্ষার্থীদের থেকেও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষে অতিদ্রুত অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।