বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি :

প্রকাশিত: ১৭:২৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

অদম্য তীর্থ দাস: প্রতিবন্ধকতার পরেও স্বপ্ন পূরণের পথচলা

অদম্য তীর্থ দাস: প্রতিবন্ধকতার পরেও স্বপ্ন পূরণের পথচলা
সংগৃহীত

তীর্থ দাস একটি অসীম সাহস, অধ্যবসায় এবং সংকল্পের প্রতীক। তার জীবনযাত্রা প্রতিফলিত করে এক অদম্য ইচ্ছাশক্তি, যা শারীরিক প্রতিবন্ধকতার প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছে। প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে, তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সঠিক মনোবল ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা দিয়ে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। ২০০৫ সালে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার মধ্যবিত্ত পরিবার সুনীল চন্দ্র দাস ও তাপসী দাসের সংসারে আগমন হয় তীর্থ দাসের। তবে তার শৈশব ছিলো সহজ নয়। মাত্র সাত বছর বয়সে, তীর্থকে ডায়াগনোসিস করা হয় ডুসনি মাসকুলার ডিষ্ট্রফি (ডিএমডি) নামক একটি বিরল রোগে, যা তার চলাফেরা ও শারীরিক ক্ষমতা সীমিত করে দেয়।

ডাক্তাররা তখন তাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, পঙ্গুত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়, এবং তার জীবনকালও খুব দীর্ঘ হবে না। তবে তার মা তাপসী দাসের অদম্য মনোবল ও ভালোবাসা তাকে কখনোই থামতে দেয়নি। মা তাপসী দাসের অবিচল সমর্থন ও সহায়তায় তীর্থ তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ২০২০ সালে তিনি এসএসসি, ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় A+ পেয়ে পাশ করেন। এখন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে, হাজারো শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতা করে তিনি ভর্তি হয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।

এ বিষয়ে তীর্থ দাস বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি আমার পরিবারের সকলের সাপোর্ট পেয়েছি। অনেক আগে থেকেই আমার কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিলো। এখন সেটা পূরণ হয়েছে যদিও এখন পড়াশোনার চাপ আর শারীরিক কষ্ট বেড়েছে। আমি ভবিষ্যতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। 

নিজের অসুস্থতার বিষয়ে তীর্থ দাস বলেন, প্রথমদিকে আমার এতো সমস্যা ছিলো না,স্বাভাবিক মানুষের মতোই হাটতে পারতাম। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উঠার পরে আমার এই সমস্যা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।তখন আমাকে কোলে করে নিয়ে বসাতে হতো। চিকিৎসার জন্য চেন্নাইতে গেলে ঐখানে পায়ে একটা বেল্ট দেয় যেটার সাহায্যে একটু হাটতে পারতাম। ভর্তি পরীক্ষার সময় থেকে আমার হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতে হয়।

মা তাপসী দাস বলেন, আমার ছেলের স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার, এবং আমি তাকে কোনোদিন সেই স্বপ্ন দেখতে বাধা দিইনি। চিকিৎসকরা যখন বলেছিল, বেঁচে থাকার কোনো আশা নেই, তখনও আমরা থামিনি। আজ আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, এটা তার কঠোর পরিশ্রম এবং আমাদের অবিচল সমর্থনের ফল।

এছাড়াও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. সুজন আলী বলেন, তীর্থ দাস আমাদের বিভাগের  ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। সে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার যারা তাদের জন্য কোটা থাকলেও গত গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় তীর্থ  মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে । তার এসএসসি, এইচএসসি রেজাল্টও অনেক ভালো। বিভাগের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী তার বিষয়ে অবগত এবং তার একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে সবাই তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করবে বলে একমত হয়েছি।

জনপ্রিয়