ছাত্রদল নেতা রহিমের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী হয়রানির অভিযোগ
ছাত্রদলের পরিচয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ এবং হলের সিট ছাড়তে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলে নেতা বনে যাওয়া আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে। হল প্রশাসনের কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই এই কাজ করেন তিনি।
গত বুধবার মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু হলের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলার একাধিক কক্ষে গিয়ে রহিমসহ ৫-৭ জন ছাত্রদলের কর্মী পরিচয়ে জোরপূর্বক ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার করেন শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ ধরনের কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকারি দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের অধীনে থাকা অবস্থায় হলের ছাত্রদের তথ্য তালিকা করা হতো, যা এখন আবার শুরু করেছে আব্দুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের একটি অংশ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হাসান আকাশ বলেন, রাত ১২ টার পর আমার রুমে হঠাৎ করে ৮-১০ জন কোন অনুমতি ছাড়াই ঢুকে পরে। পরেরদিন আমার সেমিস্টার পরীক্ষা থাকায় আমি তাদের দিকে তেমন মনোযোগ না দিয়ে পড়তে থাকি। তারপর আমার বিভিন্ন তথ্যের জন্য জেরা করা শুরু করে। পরে আমার ম্যানার খারাপ এইসব বলে তাদের খাতায় নাম, বিভাগ লিখে পাশে স্টার চিহ্ন বসিয়ে দেয়।
ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ জানান, ছাত্রদলের রহিম ভাই ৪-৫ জন নিয়ে আমাদের রুমে এসে নাম লিস্ট করে। রুমের আরেক সিটের ফজলুল ভাই তখন ক্যাম্পাসে না থাকায় তাকেও কল করে। ফজলুল ভাইয়ের মাস্টার্সের একটা ইমপ্রুভ বাকি ছিলো তাই তার সিট ক্যান্সেল করে নি। কিন্তু তাও জোরপূর্বক সেই সিটে রহিম ভাই তার জুনিয়রকে উঠিয়ে দিয়ে যায়। এটা নিয়ে আমাদের মাঝে বাকবিতন্ডাও হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রহিম সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন-হ্যা, আমি রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। স্বৈরাচারী ছাত্রলীগের পোস্টেড কোনো নেতাকর্মী কেউ হলে আছে কি না, সেটা দেখার জন্য ছাত্রদল সেখানে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থী কাউকে ডিস্টার্ব বা বের করে দেওয়া হয়নি। হলে ছাত্রলীগের পোস্টেড কেউ আছে কি না, এটা জিজ্ঞেস করা তো দোষের কিছু না৷ কথোপকথনের এক পর্যায়ে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের তথ্য কেন সংগ্রহ করছে সেটা জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে রহিম বলেন, সাংবাদিকরা নিউজ করে কি করতে পারে আমি দেখে নিবো, আর আমি কি করবো তোমরা দেখবে৷
এ বিষয়ে হল প্রশাসনের সিনিয়র হাউস টিউটর আব্দুল মুয়ীদ জানান, ‘‘শিক্ষার্থীদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ আমরা শুনেছি। হলের সিট বরাদ্দের জন্য এমন কোনো অনুমতি ছাত্রদলকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে আলাদাভাবে হলের কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়টি অনুচিত। হল প্রশাসন এ ধরনের দায়িত্ব কাউকে দেয়নি। আমরা শীঘ্রই হলের সিট বরাদ্দের তালিকা প্রকাশের জন্য কাজ করছি।’’
বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হল প্রশাসন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের জন্য কক্ষে প্রবেশ করতে পারে না। এটি অগ্রহণযোগ্য এবং আমাদের এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান জানান, হলে কে থাকবে তা হল প্রশাসন নির্ধারণ করবে। শিক্ষার্থীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে কেউ যদি ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।
উল্লেখ্য, ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ছাত্রদলের নেতা বনে যাওয়া আব্দুর রহিম এর আগে ২০১৬ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাব্বির-আপেল কমিটিতে কলা অনুষদের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের কমিটি পরিবর্তনের পর রহিম ভোল পাল্টে যোগ দেন ছাত্রদলে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সহায়তায় ২০২১ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হন। ৫ আগস্টের পর থেকে ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধানের অনুসারী হিসেবে নিজের প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।