শনিবার ১৫ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১৪ মার্চ ২০২৫

কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার!

কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বেড়েছে ৫ হাজার!
সংগৃহীত

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা কোটাবিরোধী আন্দোলনের চাপে পড়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পালিয়ে যায় ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে পরিচিত অনেক প্রভাবশালী। এর মধ্যে অনেক কোটি টাকার হিসাবধারীও ছিলেন। 

এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতায় অনেকেই ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে থাকেন। ফলে কমে যায় কোটি টাকার হিসাব সংখ্যাও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও ব্যাংকে ফিরতে থাকে আমানত। এতে তিন মাসে এক লাফে ব্যাংকগুলোয় কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। একই সঙ্গে বেড়েছে আমানত ও মোট হিসাব সংখ্যাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য জানায়, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ১৬ কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৩২টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট অ্যাকাউন্টের (হিসাব) সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ২০ লাখ ২৮ হাজার ২৫৫টি। এসব হিসাবে জমা ছিল ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে তিন মাসে হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ১২ লাখ ১৯ হাজার ২৭৭টি। আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৪৫ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন বলছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৮১টি, যা তিন মাস আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ১২৭টি। সেই হিসাবে তিন মাসে কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৯৫৪টি। এর আগে গত বছরের জুন প্রান্তিকে কোটি টাকার বেশি আমানত ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪টি।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনের অবসান ঘটে। এরপরই একশ্রেণির ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। আবার সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে অনেক দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারী অর্থ পাচার করতে পারছে না। ফলে ব্যাংকে টাকা জমা করছে; যার করণে ব্যাংকগুলোয় কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছরের শেষদিকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। ওই সময় একশ্রেণির ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়েছে। একই সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার অর্থ পাচার রোধে কঠোর অবস্থান নেয়। ফলে এখন দুর্নীতিবাজ ও ব্যাংক লুটেরা গোষ্ঠী অর্থ পাচার করতে পারছে না। যে কারণে বিভিন্ন উপায়ে তারা ব্যাংকে টাকা জমা করছে। পাশাপাশি গত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কিছু ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থার চিত্রও প্রকাশ পায়। তাতে অনেক গ্রাহক আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। এখন আবার পরিস্থিতি বুঝে ব্যাংকের অর্থ জমা করছে, ফলে সার্বিকভাবে আমানত বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব নয়। কারণ ব্যাংকে ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাব আছে। পাশাপাশি অনেক সরকারি সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিলেন ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটি টাকার হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়