শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১৯:৫৫, ৮ অক্টোবর ২০২৪

ব্যবসা গোটাচ্ছে দেড় শতাধিক কোম্পানিগুলো

ব্যবসা গোটাচ্ছে দেড় শতাধিক কোম্পানিগুলো
সংগৃহীত

দেশের অর্থনৈতিক সংকটসহ বিভিন্ন কারণে গত দুই মাসে সিটি গ্রুপ, বিএসআরএম, ইউএস-বাংলাসহ দেশি-বিদেশি যতো গ্রুপের দেড় শতাধিক কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৮৩টি কম্পানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধের যে ধারা, তাতে বিশ্লেষকরা একে কিছুটা অস্বাভাবিক বলছেন। কারণ গত অর্থবছরে ২৭৫টি বন্ধ করা হলেও এ অর্থবছরের গত তিন মাসের যে ধারা তাতে ধারণা করা হচ্ছে যে অর্থবছর শেষে এই সংখ্যা অনেক বেশি হবে।

এ অবস্থায় ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি না হলে আরো কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি বিনিয়োগ আকর্ষণে উদ্যোগ না থাকায় নতুন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে সমস্যা সমাধানে সরকারের সহযোগিতা চান ব্যবসায়ীরা।

কোম্পানিগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থায়ীভাবেই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী অবসায়নের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কোম্পানিগুলো। এরই মধ্যে ১৬০টি কোম্পানির বন্ধের প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলছে। বন্ধের তালিকায় ছোট প্রতিষ্ঠান যেমন রয়েছে, তেমনি বড় গ্রুপের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। যৌথ মূলধনী কম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে নিবন্ধিত এসব কম্পানির মধ্যে পণ্য সরবরাহ ও সেবাদানকারী উভয় খাতের প্রতিষ্ঠান আছে।

এ ছাড়া নতুন বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে নিবন্ধন নেওয়া কোম্পানিও বন্ধের তালিকায় আছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বন্যার প্রভাবে বিভিন্ন বাণিজ্যিক খাত বিশেষ করে শিল্প, পর্যটন, কৃষি ও সেবা খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন শ্রম অসন্তোষের কারণে দেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা চলছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আরো বিপাকে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। দেশে সরকার পরিবর্তনের পরে গত দুই মাসে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৬১টি কম্পানি।

এরই মধ্যে বেশ কিছু কেম্পানি আরজেএসসিতে বন্ধের আবেদনসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে। আবার কিছু কোম্পানি সাধারণ সভার বৈঠকে কোম্পানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায়। এভাবে কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়। এরই মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি আরজেএসসিতে বন্ধের আবেদনসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে। আবার কিছু কম্পানি সাধারণ সভার বৈঠকে কম্পানি বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এভাবে কম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান মীর নাসির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে থেকেই দেশের অর্থনীতি সংকটে থাকায় বেশ কিছু কোম্পানি সময়। চেয়ারম্যান মীর নাসির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে থেকেই দেশের অর্থনীতি সংকটে থাকায় বেশ কিছু কম্পানি সমস্যায় আছে। কিছু কম্পানি সংকট কাটাতে পারলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অতি দ্রুত এসব সমস্যা কাটিয়ে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে, এটা আশা করা যা

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও মীর গ্রুপের চেয়ারম্যান মীর নাসির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগে থেকেই দেশের অর্থনীতি সংকটে থাকায় বেশ কিছু কম্পানি সমস্যায় আছে। কিছু কম্পানি সংকট কাটাতে পারলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেকে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। অতি দ্রুত এসব সমস্যা কাটিয়ে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে, এটা আশা করা যায়।’

বন্ধ হচ্ছে দেশি কোম্পানি : দেশের শীর্ষস্থানীয় করপোরেট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ তাদের ৩০টি কম্পানি বন্ধ করে দিচ্ছে। কম্পানি বন্ধে অবসায়ক নিয়োগ দিয়েছে গ্রুপটি। কম্পানির অবসায়ক আইনজীবী জি কে রাজবংশী গত আগস্টে কম্পানি বন্ধের জন্য সেপ্টেম্বরে ইজিএম আহ্বান করেন। এই গ্রুপের বন্ধ করার প্রক্রিয়ায় থাকা কম্পানি হচ্ছে সিটি পোলট্রি ও ফিশ ফিড, সিটি ভেজিটেবল অয়েল মিল, কোনাপাড়া অয়েল মিলস, হাসান ভেজিটেবল অয়েল মিলস, এফ রহমান অয়েল মিলস, আজগর অয়েল মিলস, ফারজানা অয়েল রিফাইনারিজ, সিটি ব্র্যান অয়েল, সিটি কোকোনাট অয়েল মিল, রহমান কোকোনাট অয়েল মিলস, সিটি হেয়ার অয়েল, দি এশিয়া প্যাসিফিক রিফাইনার্স, সিটি সিড ক্রাশিং ইন্ডাস্ট্রিজ (ইউনিট-২), হাসান ডাল মিলস, সিটি ফাইবার্স, হাসান পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, হামিদা প্লাস্টিক কনটেইনার্স, হাসান প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি বিস্কুট, সিটি কনডেন্সড মিল্ক, হামিদা অ্যাগ্রো ফুড, শম্পা পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি, রূপসী সুগার মিলস, শম্পা সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, সাগুরনাল হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ, এফ রহমান শিপিং লাইনস, সিটি প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টিল, হোসেন্দি পেপার মিলস, সিটি টেস্টি বাইট ও দ্বীপা ফুড প্রডাক্টস।  

অন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ইউএস-বাংলা গ্রুপ তাদের পাঁচটি কম্পানি বন্ধ করতে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে কম্পানির ইজিএম করা হয়। ওই সভায় ইউএস-বিডি সিকিউরিটি সার্ভিস, ইউএস-বাংলা গ্রুপ, ইউএস-বাংলা ফর্নিচার, ইউএস-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইউএস-বাংলা অ্যাগ্রোর জন্য অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছেন কম্পানির চেয়ারম্যান মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। এ বিষয়ে জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। 

এ কে খান ওয়াটার হেলথ (বাংলাদেশ) লিমিটেড বন্ধে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে এ কে খান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লাভজনক না হওয়ায় কারখানা আগেই বন্ধ করা হয়েছিল। তবে আমরা আমাদের ব্যবসা সংকুচিত করছি না। ভিন্নভাবে আরো বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।’ 

চলতি অক্টোবরে কম্পানি বন্ধের জন্য ইজিএম করবে ড্রাগন ফার্টিলাইজার, সিটি টেকনো ভেঞ্চার, ফুডট্রি ইন্টারন্যাশনাল, আমাদের ভাবনা, ইলমিয়াত ওয়াশিং অ্যান্ড ডায়িং, অথেনটিক অ্যাসেট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট, এএএ ডিস্ট্রিবিউশন, মিন্ডমুভার টেক, স্যাটলো ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইনো সিরামিক্যাল। রয়েল বাংলা ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি বন্ধে গত আগস্ট মাসে এজিএম করেছে। বন্ধ হচ্ছে কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিকানাধীন কাশেম ল্যাম্পস লিমিটেড, কাশেম ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড ও সানলাইট ট্রেডিং অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড।

বন্ধ হচ্ছে বিদেশি কম্পানি : দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক কম্পানি ব্রাইড মেডিক্যাল অ্যান্ড এডুকেশন সার্ভিস লিমিটেড গত ১১ আগস্ট ইজিএমে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা স্বেচ্ছায় এটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভারতভিত্তিক আন্তর্জাতিক কম্পানি শিপকার্ড মেরিন বাংলাদেশ লিমিটেড স্বেচ্ছায় বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাইট টেক ইন্টারন্যাশনাল (এসএ) লিমিটেড তাদের দ্বিতীয় ইজিএমে বন্ধের অনুমোদন করা হয়েছে। 

গত আগস্টে জিনপেং ট্রেডিং কম্পানি বন্ধের জন্য অবসায়ক নিয়োগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেন সুহুই। বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে তাইওয়ানভিত্তিক মেরিল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানিও। সিঙ্গাপুরভিত্তিক হুইডিং প্রাইভেট কম্পানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কোম্পানি বন্ধের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কম্পানি বন্ধ হওয়ার বিষয়ে যৌথ মূলধন কম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর থেকে তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা হবে। আসলে কতগুলো কম্পানি বন্ধ হয়েছে এবং এসব কম্পানি কী কারণে বন্ধ হচ্ছে, সার্বিক পর্যালোচনা শেষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

বিশ্লেষকরা বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, বিক্রি হ্রাস, সুদের উচ্চ হার, শ্রম অসন্তোষ, পরিবহন ও কারিগরি সমস্যা, ডলার সংকটে কাঁচামালের ঘাটতি, বৈশ্বিক যুদ্ধ ও আকস্মিক বন্যার বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করছে ব্যবসা-উদ্যোগ। পাশাপাশি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কিছু কম্পানির ব্যবসা করার সুযোগ সীমিত হয়ে যায়।

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়