বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক বহিষ্কার

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হযরত আলী ও ওবায়দুল্লাহ (ওবায়দুল হক) কে বহিষ্কার করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং জেলা সমন্বয়কদের নিয়ে মিথ্যা বক্তব্য দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড় জেলার আহ্বায়ক ফজলে রাব্বী, সদস্য মো. আকিব ও মো. মনজিল স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এর আগে আহ্বায়ক ফজলে রাব্বি বিজ্ঞপ্তির একটি কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব আইডিতে পোস্ট করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পঞ্চগড় জেলা থেকে জানানো যাচ্ছে যে, তেঁতুলিয়া উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে আসছিলেন মো. হযরত আলী ও মো. ওবায়দুল্লাহ। কিন্তু ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে নানা ধরনের শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে জেলা সমন্বয়কদের নিয়ে মিথ্যাচার বক্তব্য দেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ ধরনের কাজকে কোনো ভাবেই সমর্থন করে না। তাই শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পঞ্চগড় জেলার পক্ষ থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করা হলো। পরবর্তী সময়ে, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো কার্যক্রমে অংশ্রহণ করতে পারবেন না বলেও বিজ্ঞোপ্তিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড় জেলার আহ্বায়ক ফজলে রাব্বী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের বহিষ্কারের মূল কারণ তারা বিভিন্ন অফিসে গিয়ে সমন্বয়ক পরিচয়ে শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। এর প্রতিবাদ করায় তারা আমাদের গুপ্ত সংগঠন ও শিবির বলে যাচ্ছে। জেলার সমন্বয়ক সান ও আমাকে মারতে এসেছে। একই সঙ্গে তারা আমাদের গুপ্ত সংগঠনের সদস্য বলে আখ্যা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তেঁতুলিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে আমরা সব সময় তাদের প্রাধান্য দিয়েছি। কিছুদিন আগে শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের উষ্কানি ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একক সিদ্ধান্তে হযরত আলী ও ওবায়দুল্লাহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধনে ডাক দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করেন। প্রচারের কিছুক্ষণ পরই তেঁতুলিয়ায় জুলাই আগস্ট আন্দোলনে যুক্ত থাকা সমন্বয়ক, পঞ্চগড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের একক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিরোধীতা ও তাদের কর্মসূচিতে যোগ না দেয়ার আহ্বান জানান। পরে রাতেই তাদের কর্মসূচি স্থগিত হয়।’
‘এই সুযোগে ইউএনওর নামের সঙ্গে আমাদের যুক্ত করে অপপ্রচার চালানো শুরু করে তারা। যার কোন ভিত্তি না থাকায় এবং বিভিন্ন শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকায় আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড় জেলা তাদের বহিষ্কার করি। কারণ আমরা সুশৃঙ্খলতাকে বিশ্বাস করি’, বলেন আহ্বায়ক ফজলে রাব্বী।
বহিষ্কারের কারণ জানতে গেলে হযরত আলী ও ওবায়দুল্লা হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কারো বাপের কথায় আন্দোলন করিনি। সারাদেশের প্রেক্ষাপটে আমরা নিজেদের জায়গা থেকে সবার মতো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। তবে যে অভিযোগ তুলে আমাদের বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে সেটার কোন ভিত্তি নেই। কারণ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড়ে কোন কমিটি নেই। আর সে কারণে তিনি বহিষ্কার করতে পারেন না। আমরা যতদূর মনে করছি জানি সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী শিবির করেন। তার মতাদর্শ বা শিবিরের সঙ্গে যুক্ত না হওয়ায় তেঁতুলিয়ার ইউএনও এটা করিয়েছে। আমরা শুরু থেকে তেঁতুলিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে কাজ করে গেছি। যেহেতু এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে আমরা এর জবাব চাই।’
এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে রাব্বী গণমাধ্যমকে বলেন, বহিষ্কারের ঘটনার সঙ্গে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমি কারো সঙ্গে যুক্ত না, শৃঙ্খলার বাইরে কোন কর্মকাণ্ডে জড়িত না। কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে সেটার সত্যতা যাচাই করে দেখা আমাদের উচিত। আমরা গণতন্ত্র বাংলাদেশ সরকারের চাকরি করতে এসেছি, আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে কাজ করি। এখানে কারো সেল্টারের প্রয়োজন নেই। কারো ছত্রছায়ায় থেকে অপকর্ম করার প্রচেষ্টা করার কোন সুযোগ এই চাকরিতে নেই। যদি কারো অভিযোগ থাকে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করুক। আমি আমার অভিভাবক শ্রদ্ধেয় অভিভাবক জেলা প্রশাসক স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি স্যারকে বলেছি যদি কোন অভিযোগ থাকে সেটা তদন্ত হোক। তদন্ত হওয়ার পর সত্য প্রমাণিত হলে আমাকে শাস্তি দেয়া হোক। আর যদি তা না হয়, তাহলে এটাকে অপপ্রচার হিসেবে ধরে নেয়া হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখানে অনেকে অনেক ভাবে চাঁদাবাজির চেষ্টা করেছে, করে আসছে। এগুলোর বিরুদ্ধে আমি সব সময় সোচ্চার থাকায় আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে।’