ওয়াজ মাহফিলে বিএনপি নেতাদের অতিথি না করায় মারধর
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে ওয়াজ মাহফিলে বিএনপি নেতাদের অতিথি না করায় আয়োজক কমিটির কয়েকজনকে মারধর করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপি ও যুবদলের নেতাদের বিরুদ্ধে। তবে ওয়াজ মাহফিল নয় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী ইউনিয়ন বিএনপি ও যুবদলের।
মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ দিকে ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় বাজারে। মারপিটের ঘটনায় ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়কসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন গুরুতর আহত হয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন।
জানা যায়, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় বাজার দারুল আরকান ক্যাডেট মাদরাসায় ৪ ডিসেম্বর (বুধবার) সন্ধ্যায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে মাদরাসার মাহফিল আয়োজক কমিটি। এতে স্থানীয় বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের কিছু নেতাকর্মী মাহফিল আয়োজক কমিটির সদস্য হন। আয়োজক কমিটির সিদ্ধান্তে স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিমকে প্রধান অতিথি ও সোনালী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা আজিজুর রহমানকে সভাপতি করেন। এতে মনক্ষুণ্ন হন আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি শাহাদাত হোসেন। তারা মাহফিলের সভাপতি ও প্রধান অতিথির পদ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এরই জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আন্ধারীঝাড় বাজারে মাহফিল আয়োজক কমিটি মাহফিলের চাঁদা আদায় করতে গেলে তাদের উপর চড়াও হয় ইউনিয়ন বিএনপি ও যুবদলের সভাপতির অনুসারীরা। এসময় মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাহারুল ইসলাম (৩৮), ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বাদল ইসলাম (৪০) যুগ্ম আহ্বায়ক রব্বানী মিয়া ও কৌশিক আহমেদসহ ৬/৭ জন। এর মধ্যে আজাহারুল ইসলাম গুরুতর আহত হয়ে ভুরুঙ্গামারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। বাকিরা স্থানীয় চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
আহত আজাহারুল ইসলাম জানান, মাদরাসাটি বাড়ির পাশে হওয়ায় আমাদের কয়েকজনকে মাহফিল আয়োজক কমিটিতে রাখা হয়েছে। পরে আমাদের সবার পরামর্শে ইউনিয়নের সর্বজনবিদিত দুই ব্যক্তিকে সভাপতি ও প্রধান অতিথি নির্বাচন করি। এ ব্যাপারটি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও যুবদল সভাপতির মনের মত হয়নি। তাদেরকে মাহফিলের সভাপতি ও প্রধান অতিথি না করায় বিভিন্ন সময় আমাদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন মাহফিলের চাঁদা আদায় করতে বাজারে গেলে তারা আমাদের উপর আক্রমণ করে এলোপাতাড়ি মারপিট শুরু করে। এতে আমিসহ আমাদের ৬/৭ জন সদস্য আহত হয়। এর আগে মাহফিলের যাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছে তাকে না থাকার জন্য তারা শাসিয়েছেন।
মাদরাসাটির প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, ৪ ডিসেম্বর বুধবার মাদরাসার বাৎসরিক মাহফিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। মাদরাসার আশপাশের বিএনপির কয়েকজনকে মাহফিল আয়োজক কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। মাহফিল উপলক্ষে তারা বাজারে টাকা কালেকশন করছিলেন হঠাৎ তাদের ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল এসে আক্রমণ করে। মাহফিলে নাম থাকা আর না থাকা বিষয় নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
আন্ধারীঝাড়র যুবদলের সভাপতি শাহাদৎ হোসেন জানান, মাহফিলে সভাপতি বা প্রধান অতিথি নিয়ে মারপিটের ঘটনা ঘটে নাই। ওদের সঙ্গে থাকা বাদল বিভিন্ন সময় আমাদের ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে আসছেন। এর প্রেক্ষিতে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এসময় সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এ ছাড়া আর কিছু না। মাহফিল নিয়ে আমাদের কোনো কিছু হয়নি। আমি নিজেও ওই মাহফিলের বিশেষ অতিথি। এ ছাড়া যারা মাহফিলে জড়িত আছেন তারও আমাদের দলীয় লোকজন। তাদের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্বে কিছু নেই।
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি কালাম সরকারের মোবাইল নম্বরে কয়েক দফা ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।