বিসিএস কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না আফসানা রাচির
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আফসানা করিম রাচির (২০) দাফন শেরপুরের নকলা উপজেলার গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর বুধবার রাত সাড়ে আটটায় উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চকবড়ইগাছি গ্রামে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানা যায়, দুর্ঘটনায় বিসিএস কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না রাচির। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মার্কেটিং বিভাগের ৫৩ ব্যাচের (২০২৩-২৪ সেশন) শিক্ষার্থী আফসানা রাচির স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার। তবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় নিহত হওয়ায় তাকে নিয়ে পরিবারের সব স্বপ্ন মিশে গেছে পিচঢালা কালো রাস্তায়।
আফসানা রাচির বাবা ব্যবসায়ী রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, তার ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে রাচি সবার ছোট। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঢাকার গ্রীণ রোডে বসবাস করলেও ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার কোদালধর এলাকায় নিজের প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি মাছের খামার পরিচালনা করেন। মাঝে-মধ্যে ময়মনসিংহ শহরের একটি বাসায় থেকে মাছের খামারগুলোর দেখভাল করেন তিনি। খোঁজখবর নিতে আসেন গ্রামের বাড়িতেও। তার ছোটমেয়ে আফসানা করিম রাচি ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ৫৩তম ব্যাচে (২০২৩-২৪ সেশন) ভর্তি হয়েছিল। রাচি থাকতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম খালেদা জিয়া আবাসিক হলে। কিছুদিন যাবত রাচির মা তার এক ছেলের সাথে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন।
রাচির স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা। কিন্তু তার সে স্বপ্ন কেড়ে নিল ঘাতক অটোরিকশা চালক। দুনিয়ার মায়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমাতে হলো রাচিকে।
এর আগে বুধবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির গ্রীণ রোডে আফসানা রাচির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে রাচির পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সহপাঠীসহ স্থানীয় মুসল্লিরা অংশ গ্রহণ করেন।
এরপর রাচির লাশ দাফনের জন্য নিজ গ্রামের বাড়ি শেরপুরের নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের চকবরইগাছি গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে রাত সাড়ে ৮টায় দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পর জাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন শোকের ছায়া নেমে আসে, তেমনি নিজ গ্রামের বাড়িতে তার লাশ পৌঁছার সাথে সাথে তাকে একনজর দেখতে ভিড় জমায় আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি এলাকার লোকজন। ওইসময় শুরু হয় শোকের মাতম।
উল্লেখ্য, গত ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাস্তা পারাপারের সময় ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশার ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় আফসানা। পরে শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার ও পরে মুমূর্ষু অবস্থায় সভারের এনাম মেডিকেল কলেজে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আফসানার এ অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কান্নায় ভেঙে পড়ে সহপাঠীরা। রাতেই জাবি শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কাঠামোগত এ হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ ৮ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে।