ভুল চিকিৎসায় নারীর মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতাল ভাঙচুর
গাজীপুরের শ্রীপুরে ভুল চিকিৎসায় আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারীর স্বজনরা হাসপাতালে ভাঙচুর করে।
গতকাল রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মাওনা চৌরাস্তার আল হেড়া হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নারীর নাম ইসমতারা (৩৪)। তিনি উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংগারদিঘী গ্রামের মো. শফিকুল ইসলামের স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইসমতারা নামের ওই নারীকে রবিবার বিকেল আড়াইটার দিকে মাওনার আল হেড়া হাসপাতালে আনা হয়। এ সময় তার প্রেসার বেশি ছিল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে পাঠান। ওই নারীকে মমেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরে স্বজনরা ওই নারীর মরদেহ আল হেড়া হাসপাতালে নিয়ে আসে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালে ভাঙচুর করে। এ সময় হাসপাতকালের একটি এম্বোলেন্স ও ভেতরে থাকা ফার্মেসিতে ভাঙচুর করা হয়। পরে স্থানীয়রা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রাতেই বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন সংশ্লিষ্টরা।
নিহতের স্বামী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমার স্ত্রী আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতাম। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে তার প্রেসার বেড়ে যায়। দ্রুত সময়ে ওই হাসপাতালে নিয়ে যাই। কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আয়েশা সিদ্দিকা তাকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা চিকিৎসা দেন। এক পর্যায়ে আমাকে জানান, তাকে অন্যত্র নিতে হবে। এ সময় আমি স্ত্রীর কাছে গিয়ে দেখি তার অবস্থা ভালো না। সে অনেক টাই অচেতন। ডাক্তারের কথা মতো তাকে অ্যাম্বুলেন্সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেই। সেখানকার চিকিৎসক জানান, অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। পরে আমার স্ত্রীর মরদেহ এই হাসপাতালে নিয়ে আসি।
শফিক আরও বলেন, ‘তেইশ বছরের দাম্পত্য জীবনে আমার কোনো সন্তান হয়নি। বাবা ডাক শুনতে একটি সন্তানের আশায় স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়ে সব শেষ করেছি। দীর্ঘ সময় ভারতে চিকিৎসা নিয়ে আমার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হয়। অধির আগ্রহে ছিলাম, এবার হয়তো বাবা হতে পারব। বাবা ডাক শুনতে পারব। সে ভাগ্য হলো না। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় স্ত্রী সন্তানের এক সঙ্গে মৃত্যু হলো। আমি এর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।’
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আবুল হোসাইন জানান, হাসপাতালে জরুরি রোগীর সেবা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ওই রোগীকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্যত্র পাঠানো হয়। ওই রোগীর মৃত্যু হলে আমাদের কি করণীয়। রোগীর লোকজন এসে হাসপাকতালে ভাঙচুর করেছে। এখন হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া অন্যকোনো উপায় নেই।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রনয় ভূষণ জানান, বিষয়টি শুনেছি। এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জয়নাল আবেদীন মন্ডল জানান, খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।