বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১

বরিশাল প্রতিনিধি :

প্রকাশিত: ২১:০৭, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বরিশালে মৎস্য আড়ত দখল করে নাম বদলাল বিএনপি নেতারা

বরিশালে মৎস্য আড়ত দখল করে নাম বদলাল বিএনপি নেতারা
সংগৃহীত

বরিশালের নগরের অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র পোর্ট রোডের মৎস্য আড়ত। এ পাইকারি মাছের বাজারের দখল নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা। গত দেড় যুগ ধরে এর দখল ছিল আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে। সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বিএনপির নেতারা আড়ত দখলে নিয়ে নাম বদলে দিয়েছেন। 

‘বরিশাল জেলা মৎস্য পাইকারি অবতরণকেন্দ্র’ নাম থাকা এই আড়তের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘শহীদ জিয়া মৎস্য পাইকারি অবতরণকেন্দ্র’। পুরোনো সাইনবোর্ডের সামনে দুদিন আগে নতুন নামের একটি ব্যানার টানানো হয়েছে। নামকরণের উদ্যোক্তাদের দাবি, চারদলীয় জোট সরকারের সময় মোকামটির নাম জিয়ার নামেই ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নাম পরিবর্তন করেছিল।

এখন আগের নাম ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে এ নামকরণের বিষয়ে কিছু জানে না বাজারটির ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এমনকি নগর বিএনপির শীর্ষনেতারাও এ বিষয়ে অবগত নন বলে দাবি করেন তারা।

পোর্ট রোডের ইলিশ মোকাম সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ২০১০ সালের দিকে এর নিয়ন্ত্রণ নেন মৎস্যজীবী লীগের নেতা খান হাবিব। তিনি ছিলেন তৎকালীন সিটি মেয়র প্রয়াত শওকত হোসেন হিরণের অনুসারী। তিনি তাঁর বাহিনী দিয়ে মোকামের পাশাপাশি রাস্তার ওপর বাজার বসিয়ে চাঁদা তুলতেন। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোকাম নিয়ন্ত্রণ করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর ‘প্রধান খলিফা’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০২৩ সালে সাদিক নগরে একক আধিপত্য হারালে মোকাম আবারও খান হাবিবের নিয়ন্ত্রণে যায়। তিনি চলতি অর্থবছরে তাঁর স্ত্রীর নামে এটি ইজারা নেন। 

গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর খান হাবিব আত্মগোপন করেন। নগরে দখল শুরু হলে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন বিএনপির নেতা মৎস্য আড়তটিতে হানা দেন। ওই ওয়ার্ডেই ব্যবসাকেন্দ্রটি অবস্থিত। ফলে ৭ ও ৮ আগস্ট সেখানে খাজনা আদায় বন্ধ ছিল। এ খবর জানাজানি হলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা গিয়ে প্রকৃত ইজারাদারের প্রতিনিধির খাজনা আদায় নিশ্চিত করেন। তবে খান হাবিবসহ তাঁর অনুসারীরা আত্মগোপনে থাকায় মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর শীর্ষ পদ বাগিয়ে নেন বিএনপিপন্থীরা। এখন তাঁদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে মোকাম। 

নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে রয়েছেন মৎস্যজীবী দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক কামাল সিকদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্যসচিব আনিচুর রহমান মিলন ও ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক খান মো. কামাল। খান কামাল আবার খান হাবিবের আপন ভাই। এ ছাড়া সদর উপজেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হয়েছেন ব্যবসায়ী জহির সিকদার। 

খান কামাল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করে বলেন, তিনি দখলের মধ্যে নেই। তবে তিনি স্বীকার করেন, নাম বদল করেছেন; কিন্তু তা অফিশিয়ালি হয়নি। 

এ বিষয় নিয়ে  মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, পোর্ট রোড মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের নাম শহীদ জিয়ার নামে রাখার বিষয়টি তাঁরা জানেন না। তাঁদের কাছ থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি। আর আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক জানিয়েছেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ সময় বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, পোর্ট রোড মৎস্য মোকামের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। সরকারিভাবে এ ধরনের কোনো অনুমোদনও দেওয়া হয়নি। 

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়