বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও কারখানা বন্ধ

আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও কারখানা বন্ধ
সংগৃহীত

আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। গতকাল রবিবার কয়েকটি পোশাক কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই কারণে ওই এলাকার ৪৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে মালিকরা।

আশুলিয়ায় আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের তিনটি পোশাক কারখানায় ব্যাপক হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা, যাদের মধ্যে অনেকেই মুখোশ পরা ছিল। দুপুরে আশুলিয়া ইউনিয়নের টঙ্গাবাড়ি এলাকায় আলিফ এমব্রয়ডারি ভিলেজ লিমিটেড, লাম মিম অ্যাপারেলস লিমিটেড ও লাম মিম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডে হামলার ফলে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সন্ধ্যায় আশুলিয়ার শিমুলতলীতে ইউফোরিয়া কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন এবং কিছু কর্মীকে মারধর করেন। এখানে র‍্যাবের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে জানান আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল চন্দ্র।

শ্রমিক অসন্তোষ মোকাবিলায় গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মালিক, শ্রমিক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরো আশুলিয়ায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাতে সমস্যা থামানো সম্ভব হয়নি।

গতকাল সকালে বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েও পরে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। কারখানার ভেতরে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা। শ্রমিক নেতারা বলছেন, অন্যায্য আন্দোলনে জড়িতরা শ্রমিক নয় এবং তাদের চিহ্নিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। মালিকপক্ষের মত, যৌথ বাহিনী বারবার আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, যা তাদের হতাশ করেছে।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম গণমাধ্যমকে বলেন, সকালে শ্রমিকরা নির্ধারিত সময়ে কারখানায় উপস্থিত হয়, কিন্তু পরে কিছু কারখানায় কাজ বন্ধ করে বসে থাকায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। আশপাশের কারখানায় ছুটি দেওয়ার পর নিরাপত্তার স্বার্থে আরও কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

শ্রমিকরা প্রধানত একটি দাবির মাধ্যমে আন্দোলন করছেন, যার মধ্যে পোশাক কারখানায় পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি রয়েছে। বর্তমানে পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে বেশি, তবে এটি কিছুটা কমেছে। গবেষণা সংস্থা ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে নারী শ্রমিকের হার ৫৭ শতাংশ।

বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল গণমাধ্যমকে বলেন, সমন্বয়ে বড় ঘাটতি রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এখন তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখছে না। শ্রমিক নেতাদের মতে, মজুরি ছাড়া অন্য কোনো ইস্যুতে আন্দোলন হয়নি, এটি নতুন পরিস্থিতি। কিছু কারখানায় সমস্যা রয়েছে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।

আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের ম্যানেজার মোহাম্মদ রেফাই সিদ্দিক জানান, রোববার সকালে ১৫ শতাধিক শ্রমিক কাজে যোগ দেন। তবে সকালে ২০০-৩০০ মুখোশধারী দুর্বৃত্ত লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে ভাঙচুর, লুটপাট হয় এবং প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, কিন্তু এখনও কাউকে আটক করা যায়নি।

এছাড়া, গাজীপুরের টঙ্গীতেও শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন। শ্রমিকদের দাবি সমাধানে মালিক পক্ষ ও শিল্প পুলিশ কাজ করছে। শ্রমিক মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের হেল্প লাইন (১৬৩৫৭) সেবা চালু রয়েছে, যা শ্রমিক অসন্তোষ-সংক্রান্ত অভিযোগ জানানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।

সম্পর্কিত বিষয়:

জনপ্রিয়