দাদন ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন
নীলফামারীর ডিমলায় দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। ফাঁকা ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে চড়া সুদে টাকা নিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সুদে-আসলে জমা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই হচ্ছেন ঘর ছাড়া। অনেকে সুদের টাকা পরিশোধ করার পরেও চেক ও স্ট্যাম্পের মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এরপরও প্রতিকার না পেয়ে মানববন্ধন করেছেন তারা।
শনিবার(৭সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডিমলা থানার মুল ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগীরা।
মানববন্ধনে উপেজলার নাউতারা এলাকার লাভলী আক্তার খুশী জানান, প্রায় ২ বছর আগে লাভলীর বড়ভাই তরিকুল ইসলাম একই এলাকার আইনুল নামে এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছে ২০ হাজার টাকার সুদের ওপর নেন। সেসময় জামিনদার হিসেবে লাভলীর কাছ থেকে দুইটি ফাঁকা ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প নেন ওই দাদন ব্যবসায়ী। পরে লাভলীর বড় ভাই সময়মতো সেই সুদের টাকা দিতে না পারায় চাপ প্রয়োগ করে ১১ শতক জমি লিখে নেন দাদন ব্যবসায়ী আইনুল ইসলাম। আর জামিনদার হিসেবে ফাঁকা ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প জমা থাকায় লাভলীর পরিবারের লোকজনের কাছে আরও ২৩ শতক জমি লিখে নেন ওই দাদন ব্যবসায়ী। জমি লিখে নিয়েও ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প নিজের কাছে রেখে প্রতিনিয়ত লাভলীর বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন আইনুল। পরে এসব হয়রানী থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন দপ্তরে আইনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। তবে অভিযোগ দেওয়ার একমাসেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি।
শুধু লাভলীই নয় দাদন ব্যবসায়ী আইনুলের চাপে গ্রাম ছেড়েছেন শতাধিক পরিবার। এসব ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি দাদন ব্যবসায়ী আইনুল ফাঁকা ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প নিয়ে চড়া সুদে টাকা দেন। পরে সুদে-আসলে জমা টাকা পরিশোধ করার পরও ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত পান না তারা। এরপর শুরু হয় নানা হুমকি-ধামকি।
ভুক্তভোগী লাভলী আক্তার খুশী বলেন, আমার ভাই সুদখোর আইনুলের কাছে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিল। এ জন্য জামিনদার হিসেবে আমাকে দুইটি ফাঁকা ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প দিতে হয়েছিল। আমার ভাই কিছুদিন টাকা দিতে না পারায় তার কাছ থেকে চাপ প্রয়োগ করে ১১ শতক জমি লিখে নিয়েছে আইনুল। আমি জামিনদার থাকায় আমার পরিবারের লোকজনের কাছে আরও ২৩ শতক জমি লিখে নেয় এই আইনুল।জমি লিখে নেওয়ার পরও বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। আমরা গ্রামবাসী এই আইনুলের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। এই গ্রামের শতাধিক পরিবার বাড়ি ছাড়া তার একমাত্র কারণ এই সুদখোর আইনুল। আমরা তার কাছ থেকে মুক্তি চাই, তার একটা দৃষ্টান্তমূলক বিচার হোক আমরা সেটাই চাই। এ আইনুল দৈনিক লাভে মানুষের কাছে টাকা দিয়ে থাকে। এক দুই দিন টাকা দিতে না পারলে তার বাড়িতে গিয়ে চেক স্টাম্পের মামলার হুমকি দেয়। আমি আমার ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা, ডিসি, এসপিকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তারা তার বিচার করার আশ্বাস দিয়েছে। আমি চাই আইনুলের কারনে গ্রাম ছাড়া পরিবারগুলো গ্রামে ফিরে আসুক তাদের সন্তানদের কাছে একসাথে পরিবারের থাকুক।
আরেক ভুক্তভোগী একই এলাকার সাইদুল ইসলাম। মেয়ের চিকিৎসার জন্য আইনুলের কাছ থেকে সুদের ওপর ১০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সুদে-আসলে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরও সাইদুলের কাছে আরও টাকা দাবি করছেন আইনুল। দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখান ওই দাদন ব্যবসায়ী। এসব সহ্য করতে না পারায় গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি।
সাইদুল ইসলাম বলেন, আমি সুদখোর আইনুলের কাছ থেকে আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। সুদে-আসলে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি তাকে। এখন সে আরো টাকা দাবি করছে তার জন্য আমি বাড়িতে থাকতে পারছি না। একারনে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঢাকা চলে এসেছি। আমি চাই স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এই গ্রামে বসবাস করতে। কিন্তু আইনুলের কারনে পারছি না। এই আইনুলের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছে সে সর্বস্বান্ত হয়েছে। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি
সাইদুলের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমার বাবা আমার চিকিৎসার জন্য আইনুলের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছিল। সেটি সুদে-আসলে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। কিন্তু আইনুল যে আমার বাবার কাছ থেকে চেক এবং স্ট্যাম্প নিয়েছে সেগুলো ফেরত দেয়নি। তিনি বিভিন্ন কৌশলে চেক এবং স্ট্যাম্প আটকে রেখেছেন। এখন সে আরো টাকা দাবি করে তার বিভিন্ন আমার পরিবারের কেউই এই বাড়িতে থাকতে পারে না। তার ভয়ে ঢাকায় পালিয়ে আছে শুধু আমার বাবা-মা না শুধু এই এলাকার অনেক পরিবারেই এমন দশা করেছেন আইনুল। সে কখনোই কারো যে স্ট্যাম্প ফেরত দেয় না এবং জোর করে টাকা দাবি করে। তার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়ায় অনেকেই।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আইনুল ইসলাম বলেন, আমি মুরগীর ব্যবসা করি কোনো সুদের ব্যবসা করিনা। কেউ বলতে পারবে না। তাদের কাছ থেকে জমি কিনে নিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা।