বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

ইমরানুল আজিম চৌধুরী, ঢাকা

প্রকাশিত: ০০:৫৬, ২২ অক্টোবর ২০২৪

অনলাইনে রমরমা ‘পতিতা বাণিজ্য’

অনলাইনে রমরমা ‘পতিতা বাণিজ্য’
অনলাইনে রমরমা ‘পতিতা বাণিজ্য’

ইভান আহমেদ (ছদ্মনাম) একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। পারিবারিকভাবে ডিভোর্স না হলেও সেপারেশনে থাকছেন দীর্ঘদিন যাবৎ৷ 

 

শারীরিক চাহিদা থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সার্চ দেন ‘কল গার্ল গ্রুপ’ লিখে৷ আরব্য রজনীর গল্পে আলাদিনের দৈত্য বের হয়ে আলাদিনের কোনো ইচ্ছে পূরণে সক্ষম হয়েছিল কী না তার সত্যতা জানা নেই। 

 

তবে ইভানের কামবাসনা পূরণের প্রথম পথ তৈরিতে ফেসবুকের অবদান ছিল। তিনি দেখতে পান একাধিক গ্রুপ রয়েছে এ সম্পর্কিত। সবগুলো গ্রুপেই সদস্য সংখ্যা ১০ হাজারের ওপরে। পরে তিনি সেসব গ্রুপে পোস্ট করার মাধ্যমে পরিচয় হয় এক নারীর। ধীরে ধীরে তৈরি হয় সখ্যতা, তারপর এক পর্যায়ে সেই নারী লুটে নেন ইভানের সব। সবশেষ চাকরিও হারান সেই নারীর ফাঁদে পড়ে।

 

এমন গল্প শুধু ইভান সাহেবের একারই নয়, এমন আরেক ভুক্তভোগী আসিফ জাবের (ছদ্মনাম)। 

 

তিনি সংবাদ পরিক্রমাকে বলেন- আমি বিয়ে করিনি। ‘লিভ টুগেদার’ নামক একটি গ্রুপে লিভ টুগেদারে কেউ ইচ্ছুক কী না জানার জন্য পোস্ট করি। অনেকেই রেসপন্স করে, কিন্তু একজন মেয়ে বিশ্বস্ত ভেবে তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। পরবর্তীতে সে মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে আমাকে ব্লাকমেইল করেছে৷ একসময় ধর্ষণ মামলা করারও হুমকি দিয়েছিল আমাকে। আমি বেশকিছু টাকা দিয়ে বিষয়টির সমাধান করেছি।

 

এসব বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করেছে সংবাদ পরিক্রমা। এ সময় দেখা যায়, ‘Live Together Partner in Dhaka’ নামে ফেসবুকে একটি গ্রুপ রয়েছে যার সদস্য সংখ্যা ৫৯ হাজার। আছে Contract Marriage Live Together, যার সদস্য সংখ্যা ৬৪ হাজার। এরকম অসংখ্য গ্রুপ রয়েছে ফেসবুকে আছে যা মানুষের যৌনতাকে উসকে দেয়। এর নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান বলা বাহুল্য। 

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার সংবাদ পরিক্রমাকে বলেন, সমাজবিজ্ঞানের সোশ্যাল কন্ট্রোল বা সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে একটা শব্দ। যেখানে আমরা সকলেই সকলের পরিচয় সম্পর্কে অবগত রয়েছি। কিন্তু ফেসবুক কেউ চাইলেই নিজের পরিচয় গোপন করে সেখানে থাকতে পারে। ফলে তাকে চিহ্নিত করাও কখনও কখনও অসম্ভব হয়ে পরে। এর ফলেই মূলত সুযোগ সন্ধানীরা সুযোগ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে এই গ্রুপগুলোকে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয়ভাবে এর তদারকি করা প্রয়োজন, অন্যথায় এগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আর সর্বোপরি বলা চলে নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণেই এসব গ্রুপ গড়ে উঠেছে। ইদানিং সোশ্যাল আইসোলেশনও অনেকাংশে দায়ী।

 

এ প্রসেঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ বি এম নাজমুস সাকিব সংবাদ পরিক্রমাকে বলেন, এ ধরনের অপরাধগুলো বেশিরভাগ সময়ে পূর্ব শর্ত থাকে। প্রাথমিকভাবে যিনি ভিক্টিম হন, তার আগ্রহ থেকেই মূলত এই ধরনের গ্রুপে অংশ নেন। সামাজিক পারিবারিক ধর্মীয় শিক্ষা থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি ফলে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতা আমাদের ভেতরে দেখা দিয়েছে। পারিবারিক চেক এন্ড ব্যালেন্সের জন্য অনেকাংশে দায়ী। ফেইসবুক একটি অন্ধকার জগতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই ব্যক্তিগত পরিচয় লুকিয়ে এই মাধ্যম ব্যবহার করছেন। ফলে অপর প্রান্তের মানুষটি কার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করছে তা নিয়ে অন্ধকারে থেকে যান। বলা চলে সচেতনতা এর বড় অন্তরায়। 

 

এখনই সরকারের উচিত সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি রেগুলেশন আনা। যার মাধ্যমে কেউ চাইলেই একাধিক কিংবা পরিচয় গোপন করে এই মাধ্যমে আসতে পারবে না। এতে অপরাধ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

জনপ্রিয়