মে দিবস আসে আর যায় বাড়ে না মজুরি
ডোমার বাজারে রেল ঘুন্টির পারে ডায়মন্ড মার্কেটের সামনে সকাল ৮ টা হতেই একে একে জড়ো হতে থাকেন শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের রাজমিস্ত্রী, মাটি কাটা এবং সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন ভবন ও রাস্তাঘাটে কাজ করা শ্রমিকরা। সকাল ৯টার মধ্যেই নানা পেশার শ্রমজীবী মানুষে সরগরম হয়ে ওঠে ডোমারে বিভিন্ন মোড়, এই চিত্র যেনো নিত্যদিনের।
দেশে টানা দুই সপ্তাহজুড়ে চলছে হিট অ্যালার্ট। এ তপ্ত রোদ, ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ, পেটের দায়ে তখনও ভোর থেকেই ডোমারে মোড়ে মোড়ে দেখা যায় শ্রমজীবী মানুষের জটলা। পেটের দায়ে আগুন ঝরা রোদে পুড়ে কাজ করতেই তাদের এ জটলা। সারাদিন কাজ করে মিলে অল্প মজুরি। সেটাই পুরো পরিবারের বেঁচে থাকার পাথেয়।
বুধবার (১ মে) মহান মে দিবস পালিত হয়। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এ দিনটি সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়, তাদের অনেকেই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। পেটে ক্ষুধা আর কিস্তি জালা নিয়ে তা জানার প্রয়োজনও পড়ে না।
দারিদ্র্য আর অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে দিন কেটে যায় মেহনতি মানুষগুলোর। নিজের কথা চিন্তা না করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যেতে হয় শ্রমজীবী মানুষকে। মেহনতি মানুষের অধিকার আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ডোমারে ডায়মন্ড মার্কেটের সামনে কথা হয়, কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। বললেন, ন্যায্য মজুরি পান না তারা। বছরের অন্যান্য দিনের মতো এ দিনেও প্রখর রোদ মাথায় নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। পেটের ক্ষুধা কোনও ‘দিবস’ বুঝে না।
ডোমারে বোড়াগাড়ি বাজারে নির্মানাধীন একটি ভবনের শ্রমিক সোহেল বলেন, মে দিবস আবার কি? সারাবছরই সকাল থেকে সন্ধ্যা আমাদের কাজ করতে হয়। দিবস দিয়ে তো আর পেটে ভাত জুটবে না। আমাদের কাজ আর কেউ করে দিবে না। কাজ না করলে টাকা দিবে না। এসব দিবস আসে যায়, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।
ডোমার উপজেলার দোলাপাড়া গ্রামের শ্রমিক মিলন তিনি বলেন, ছোটবেলায় মা-বাবা পড়ালেখা করাতে চেয়েছিল। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ইট তৈরি করি ভাটায় কাজ শুরু করি। যা পাই তা দিয়ে কোন রকম সংসার চলছে। মে দিবস এলেই অধিকারের কথা শুনি। এরপর আর শুনি না।
ডোমার বাজারে গ্রিল মিস্ত্রি তার ছদ্মনাম মকবুল বলেন, এই মে দিবস এলেই র্যালি আর আলোচনা সভায় যাওয়ার জন্য ফোন করে। ওখানে গিয়ে কোনো লাভ হয় না। পাঁচ বছর আগেও যে মজুরি পেতাম, এখনো তাই পাই। কাজ করতে হয় ১২ ঘণ্টারও বেশি।
নির্মাণ শ্রমিক জুয়েল বলেন, প্রতিবছর মে দিবস আসে আর যায়। শ্রমিকদের ভাগ্য পরিবর্তন হয় না। আমরা যেসব দিক দিয়ে বঞ্চিত, তা কখনোই পাই না। না বাড়ে মজুরি, না কমে কাজের সময় ।
রংমিস্ত্রি নাম বলতে অনিচ্ছুক তিনি বলেন, ডোমারে উপজেলায় অনেক সংগঠন আছে। তারা শুধু মে দিবস আসলেই তাদের তৎপরতা দেখা যায় তাছাড়া তাদের আর কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায় না ।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবেও চিহ্নিত এই দিনটির ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। কেন পালন করা হয় এই দিবসটি। আর এই এই দিবসের তাৎপর্যই বা কী?
১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ন্যায্য মজুরি এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। আর এরপর থেকেই এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে মে দিবস বা শ্রমিক দিবস হিসেবে।
আ/ম